প্রেসার লো হলে করণীয় - জানুন ১৫টি কার্যকর উপায়
পেজ সূচিপত্র : প্রেসার লো হলে করণীয়
- প্রেসার লো হলে করণীয়
- প্রেসার লো হলে কি খাওয়া উচিত
- প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয়
- প্রেসার লো হওয়ার কারণ
- প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ
- লেখকের শেষ মন্তব্য : প্রেসার লো হলে করণীয়
প্রেসার লো হলে করণীয়
বর্তমান যুগে ব্যস্ততা, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে রক্তচাপের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, আবার অনেকের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, যাকে আমরা সাধারণভাবে “প্রেসার লো” বলি। রক্তচাপ হাই বা লো—দুটোই শরীরের জন্য সমানভাবে ক্ষতিকর। হাই প্রেসার হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, আর লো প্রেসার শরীরে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা। কিন্তু যদি কখনও প্রেসার লো হয়ে যায়, তখন সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেকেই তখন ভুল সিদ্ধান্ত নেন, যেমন—ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া বা পানি কম খাওয়া ইত্যাদি, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে। আজ আমরা জানব প্রেসার লো হওয়ার সঠিক করণীয় কী, কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, এবং এই সময় কী খাওয়া বা এড়িয়ে চলা উচিত। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই—প্রেসার লো হলে করণীয় :
-
ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না : অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন এবং প্রেসার লো হলে ভেবে নেন যে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়াই সঠিক উপায়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করলে শরীরে হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গিয়ে বিপদের আশঙ্কা থাকে। তাই এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধের মাত্রা বা ধরণ পরিবর্তন করতে হবে।
-
প্রেসার লো হওয়ার কারণ খুঁজে বের করুন : প্রেসার লো হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে—যেমন শরীরে পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত ঘাম, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, রক্তাল্পতা, মানসিক চাপ, বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই মূল কারণ বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু প্রেসার বাড়ানোর ওষুধ খেয়ে নয়, বরং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাও গুরুত্বপূর্ণ।
-
পর্যাপ্ত পানি ও তরল পান করুন : শরীরে পানি কমে গেলে প্রেসার কমে যেতে পারে। দিনে পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস, স্যুপ বা লবণযুক্ত ওরস্যালাইন খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গরমের সময় শরীরে ঘামের মাধ্যমে অনেক পানি বেরিয়ে যায়, তখন তরল গ্রহণ আরও বাড়ানো উচিত।
-
লবণযুক্ত খাবার খান : লবণ শরীরে সোডিয়াম বাড়িয়ে প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তবে এটি অতিরিক্ত নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেতে হবে। যেমন—সুপ, ডাল, বা হালকা লবণ মিশ্রিত পানি পান করা যেতে পারে।
-
অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন : অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রম প্রেসার লো-এর ঝুঁকি বাড়ায়। তাই শরীর যখন দুর্বল অনুভব করে, তখন বিশ্রাম নেওয়া উচিত। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
-
হঠাৎ উঠে দাঁড়াবেন না : অনেকে বসা বা শোয়া অবস্থান থেকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েন, এতে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে হবে।
-
ডাক্তারের পরামর্শ নিন : যদি প্রেসার লো বারবার হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এটি কোনো বড় সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন—হরমোনের সমস্যা, হার্টের জটিলতা বা রক্তস্বল্পতা। তাই দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রেসার লো হওয়া সাধারণ মনে হলেও, এটি উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। সঠিক যত্ন ও নিয়ম মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাই শরীরে দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা অনুভব করলে অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান ও নিয়মিত বিশ্রামই হতে পারে প্রেসার লো প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
প্রেসার লো হলে কি খাওয়া উচিত
প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয়
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সচেতন থাকলেও, নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার নিয়ে তেমন ভাবেন না। অথচ হাই প্রেসারের মতোই লো প্রেসারও শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ রক্তচাপ খুব কমে গেলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন—মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড ও কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়, যার ফলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই শরীরের রক্তচাপ সবসময় স্বাভাবিক অবস্থায় রাখার চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি। এখন দেখা যাক, প্রেসার লো হলে শরীরে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে—
- নাড়ির গতি দ্রুত হয়ে যায় : লো প্রেসারের কারণে শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। ফলে হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত কাজ শুরু করে। এতে পালস রেট বা নাড়ির গতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, যা অনেক সময় হার্টবিট অনিয়মিত করে তুলতে পারে।
- হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া : প্রেসার লো হলে শরীরের রক্ত চলাচল ধীর হয়ে যায়। এতে হাত-পা ঠান্ডা লাগতে থাকে এবং অনেক সময় আঙুলে ঝিনঝিন ভাবও অনুভূত হতে পারে। এটি শরীরের রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার স্পষ্ট লক্ষণ।
- ডায়রিয়া, বমি বা পানিশূন্যতা দেখা দেয় : লো প্রেসারের অন্যতম কারণ শরীরে পানিশূন্যতা। অনেক সময় ডায়রিয়া, বমি বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে শরীর থেকে লবণ ও তরল বেরিয়ে যায়, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। এতে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি বেড়ে যায়।
- চোখে ঝাপসা দেখা : রক্তচাপ কমে গেলে মস্তিষ্ক ও চোখে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয় না, ফলে চোখে ঝাপসা দেখা দিতে পারে বা অন্ধকার দেখার মতো অনুভূতি হতে পারে। অনেকেই হঠাৎ দাঁড়ালে এই সমস্যা বেশি অনুভব করেন।
- শরীরে অতিরিক্ত দুর্বলতা অনুভব : লো প্রেসারের কারণে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি না পাওয়ায় সারাদিন দুর্বল লাগে। কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়, এবং হাঁটাহাঁটি করতেও ক্লান্তি আসে।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া : রক্তচাপ অত্যন্ত নিচে নেমে গেলে মস্তিষ্কে সাময়িকভাবে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক লক্ষণগুলোর একটি এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
- শারীরিক ও মানসিক অবসাদ : লো প্রেসার দীর্ঘস্থায়ী হলে শরীরের শক্তি কমে যায় এবং মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেয়। মনোযোগ কমে যায়, মাথা ভার লাগে, এবং স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলা স্বাভাবিক ব্যাপার।
- ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া : রক্তচাপ কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করতে শরীর দ্রুত শ্বাস নিতে শুরু করে। ফলে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস দেখা যায়, যা অনেক সময় শ্বাসকষ্টের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
লো প্রেসার কোনো তুচ্ছ সমস্যা নয়। এটি শরীরের ভেতরের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং সময়মতো যত্ন না নিলে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রক্তচাপ কমে গেলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশ্রাম নিন, পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার খান, এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন — স্বাভাবিক রক্তচাপ মানেই সুস্থ জীবন।

নাক্ষোমা এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url