*/

প্রেসার লো হলে করণীয় - জানুন ১৫টি কার্যকর উপায়

প্রেসার লো হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। অনেক সময় রক্তচাপ কমে গেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। প্রেসার লো হলে কী খাবেন, কীভাবে যত্ন নেবেন এবং কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন—সব জানুন এখানে।
প্রেসার-লো-হলে-করণীয়


বর্তমান ব্যস্ত জীবনে রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে চিন্তিত থাকেন, কিন্তু নিম্ন রক্তচাপ বা প্রেসার লো হওয়াও কম বিপজ্জনক নয়। প্রেসার লো হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই প্রেসার লো হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে জানা সবার জন্যই প্রয়োজনীয়।

পেজ সূচিপত্র : প্রেসার লো হলে করণীয় 

প্রেসার লো হলে করণীয় 

বর্তমান যুগে ব্যস্ততা, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে রক্তচাপের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, আবার অনেকের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, যাকে আমরা সাধারণভাবে “প্রেসার লো” বলি। রক্তচাপ হাই বা লো—দুটোই শরীরের জন্য সমানভাবে ক্ষতিকর। হাই প্রেসার হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, আর লো প্রেসার শরীরে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা। কিন্তু যদি কখনও প্রেসার লো হয়ে যায়, তখন সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেকেই তখন ভুল সিদ্ধান্ত নেন, যেমন—ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া বা পানি কম খাওয়া ইত্যাদি, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে। আজ আমরা জানব প্রেসার লো হওয়ার সঠিক করণীয় কী, কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, এবং এই সময় কী খাওয়া বা এড়িয়ে চলা উচিত। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই—প্রেসার লো হলে করণীয় : 

  • ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না : অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন এবং প্রেসার লো হলে ভেবে নেন যে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়াই সঠিক উপায়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করলে শরীরে হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গিয়ে বিপদের আশঙ্কা থাকে। তাই এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধের মাত্রা বা ধরণ পরিবর্তন করতে হবে।

  • প্রেসার লো হওয়ার কারণ খুঁজে বের করুন : প্রেসার লো হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে—যেমন শরীরে পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত ঘাম, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, রক্তাল্পতা, মানসিক চাপ, বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই মূল কারণ বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু প্রেসার বাড়ানোর ওষুধ খেয়ে নয়, বরং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাও গুরুত্বপূর্ণ।

  • পর্যাপ্ত পানি ও তরল পান করুন : শরীরে পানি কমে গেলে প্রেসার কমে যেতে পারে। দিনে পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস, স্যুপ বা লবণযুক্ত ওরস্যালাইন খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গরমের সময় শরীরে ঘামের মাধ্যমে অনেক পানি বেরিয়ে যায়, তখন তরল গ্রহণ আরও বাড়ানো উচিত।

  • লবণযুক্ত খাবার খান : লবণ শরীরে সোডিয়াম বাড়িয়ে প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তবে এটি অতিরিক্ত নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেতে হবে। যেমন—সুপ, ডাল, বা হালকা লবণ মিশ্রিত পানি পান করা যেতে পারে।

  • অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন : অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রম প্রেসার লো-এর ঝুঁকি বাড়ায়। তাই শরীর যখন দুর্বল অনুভব করে, তখন বিশ্রাম নেওয়া উচিত। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

  • হঠাৎ উঠে দাঁড়াবেন না : অনেকে বসা বা শোয়া অবস্থান থেকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েন, এতে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে হবে।

  • ডাক্তারের পরামর্শ নিন : যদি প্রেসার লো বারবার হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এটি কোনো বড় সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন—হরমোনের সমস্যা, হার্টের জটিলতা বা রক্তস্বল্পতা। তাই দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রেসার লো হওয়া সাধারণ মনে হলেও, এটি উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। সঠিক যত্ন ও নিয়ম মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাই শরীরে দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা অনুভব করলে অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান ও নিয়মিত বিশ্রামই হতে পারে প্রেসার লো প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

প্রেসার লো হলে কি খাওয়া উচিত 

প্রেসার লো হলে শুধুমাত্র ওষুধ নয়, সঠিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমেও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা যায়। শরীরে পানিশূন্যতা, পুষ্টির অভাব বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস অনেক সময় লো প্রেসারের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিচের খাবারগুলো নিয়মিত খেলে আপনি সহজেই রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে

  • খাবার স্যালাইন : লো প্রেসার হলে শরীরে পানির অভাব বা ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি দেখা দেয়। এই অবস্থায় এক গ্লাস পানি সঙ্গে খাবার স্যালাইন মিশিয়ে পান করলে শরীরে দ্রুত পানি ও লবণের ভারসাম্য ফিরে আসে। এটি মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করতে খুবই কার্যকর।
  • গ্লুকোজ : প্রেসার হঠাৎ কমে গেলে এক গ্লাস পানিতে গ্লুকোজ মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়। এটি রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরকে চাঙা করে এবং লো প্রেসারের প্রভাব কিছুটা কমিয়ে দেয়।
  • দুধ ও ডিম : দুধ ও ডিম শরীরের জন্য উচ্চমানের প্রোটিন ও পুষ্টির উৎস। প্রেসার লো হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পুষ্টিহীনতা, তাই প্রতিদিনের খাবারে দুধ ও ডিম যুক্ত রাখলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • কিসমিস : রাতের বেলা এক কাপ পানিতে কিছু কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে তা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কিসমিসে থাকা প্রাকৃতিক গ্লুকোজ ও মিনারেল শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং লো প্রেসারের ঝুঁকি কমায়।
  • মধু ও বাদাম : মধু শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়, আর বাদামে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও মিনারেল যা রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ মধু ও কয়েকটি কাজুবাদাম বা কাঠবাদাম খাওয়া উপকারী।
  • তাজা শাকসবজি ও ফলমূল : তাজা শাকসবজি ও ফল শরীরে ভিটামিন, মিনারেল ও আয়রন সরবরাহ করে। এগুলো রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং রক্তচাপ সঠিক মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বিটরুট, পালং শাক, কলা, আপেল ও ডালিম লো প্রেসারে ভালো ফল দেয়।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা করুন : সঠিক খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং হার্টকে সক্রিয় রাখে। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকর।
  • লবণযুক্ত খাবার খান : সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে, তাই লো প্রেসার হলে অল্প লবণ মিশ্রিত পানি বা লবণযুক্ত খাবার খেতে পারেন। তবে পরিমাণে অতিরিক্ত যেন না হয়, সেটা মনে রাখা জরুরি।

প্রেসার লো হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমেই শরীরের যত্ন নিন এবং প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পানি, পুষ্টিকর খাদ্য, বিশ্রাম ও নিয়মিত শরীরচর্চা—এই চারটি নিয়ম মেনে চললেই আপনি সহজে প্রেসার লো-এর সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয় 

আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সচেতন থাকলেও, নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার নিয়ে তেমন ভাবেন না। অথচ হাই প্রেসারের মতোই লো প্রেসারও শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ রক্তচাপ খুব কমে গেলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন—মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড ও কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়, যার ফলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই শরীরের রক্তচাপ সবসময় স্বাভাবিক অবস্থায় রাখার চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি। এখন দেখা যাক, প্রেসার লো হলে শরীরে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে—

  • নাড়ির গতি দ্রুত হয়ে যায় : লো প্রেসারের কারণে শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। ফলে হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত কাজ শুরু করে। এতে পালস রেট বা নাড়ির গতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, যা অনেক সময় হার্টবিট অনিয়মিত করে তুলতে পারে।
  • হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া : প্রেসার লো হলে শরীরের রক্ত চলাচল ধীর হয়ে যায়। এতে হাত-পা ঠান্ডা লাগতে থাকে এবং অনেক সময় আঙুলে ঝিনঝিন ভাবও অনুভূত হতে পারে। এটি শরীরের রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার স্পষ্ট লক্ষণ।
  • ডায়রিয়া, বমি বা পানিশূন্যতা দেখা দেয় : লো প্রেসারের অন্যতম কারণ শরীরে পানিশূন্যতা। অনেক সময় ডায়রিয়া, বমি বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে শরীর থেকে লবণ ও তরল বেরিয়ে যায়, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। এতে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি বেড়ে যায়।
  • চোখে ঝাপসা দেখা : রক্তচাপ কমে গেলে মস্তিষ্ক ও চোখে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয় না, ফলে চোখে ঝাপসা দেখা দিতে পারে বা অন্ধকার দেখার মতো অনুভূতি হতে পারে। অনেকেই হঠাৎ দাঁড়ালে এই সমস্যা বেশি অনুভব করেন।
  • শরীরে অতিরিক্ত দুর্বলতা অনুভব : লো প্রেসারের কারণে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি না পাওয়ায় সারাদিন দুর্বল লাগে। কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়, এবং হাঁটাহাঁটি করতেও ক্লান্তি আসে।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া : রক্তচাপ অত্যন্ত নিচে নেমে গেলে মস্তিষ্কে সাময়িকভাবে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক লক্ষণগুলোর একটি এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
  • শারীরিক ও মানসিক অবসাদ : লো প্রেসার দীর্ঘস্থায়ী হলে শরীরের শক্তি কমে যায় এবং মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেয়। মনোযোগ কমে যায়, মাথা ভার লাগে, এবং স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলা স্বাভাবিক ব্যাপার।
  • ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া : রক্তচাপ কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করতে শরীর দ্রুত শ্বাস নিতে শুরু করে। ফলে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস দেখা যায়, যা অনেক সময় শ্বাসকষ্টের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

লো প্রেসার কোনো তুচ্ছ সমস্যা নয়। এটি শরীরের ভেতরের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং সময়মতো যত্ন না নিলে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রক্তচাপ কমে গেলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশ্রাম নিন, পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার খান, এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন — স্বাভাবিক রক্তচাপ মানেই সুস্থ জীবন।

প্রেসার লো হওয়ার কারণ 

আমরা প্রায় সবাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে চিন্তা করি, ওষুধ খাই, সাবধানতা অবলম্বন করি — কিন্তু নিম্ন রক্তচাপ বা “লো প্রেসার” নিয়ে খুব কমই সচেতন থাকি। অথচ লো প্রেসারও শরীরের জন্য সমানভাবে বিপজ্জনক। এটি শরীরের স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদপিণ্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পায় না। সাধারণত রক্তচাপ ৯০/৬০ mmHg বা তার নিচে থাকলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়। এবার দেখে নেওয়া যাক, প্রেসার লো হওয়ার মূল কারণগুলো কী কী।

  • শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন): গরমের সময় অতিরিক্ত ঘাম, বমি বা ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। যখন শরীরে পানির ঘাটতি হয়, তখন রক্তের পরিমাণও কমে যায়, ফলে রক্তচাপ দ্রুত নিচে নেমে যায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, ফলের রস ও তরল খাবার খাওয়া জরুরি।
  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম : অনেক সময় নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত কাজ করলে শরীরের শক্তি ক্ষয় হয়ে যায় এবং রক্তচাপ হ্রাস পায়। এটি বিশেষ করে গরমে কাজ করার সময় বেশি ঘটে। তাই শরীরের সহনশীলতা অনুযায়ী পরিশ্রম করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
  • খাবারের চাহিদা পূরণ না হওয়া : আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ কাজ করে খাবার থেকে পাওয়া শক্তির মাধ্যমে। যদি নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে গ্লুকোজ ও পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়, যা প্রেসার লো হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ : মানসিক অস্থিরতা, ভয় বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা রক্তচাপ হঠাৎ কমিয়ে দিতে পারে। তাই মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা, ধ্যান বা মেডিটেশন করা ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
  • ঘুমের অভাব : পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যদি প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম না হয়, তবে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, হার্টবিটের গতি অনিয়মিত হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগা অভ্যাস করা উচিত।
  • অপুষ্টিজনিত সমস্যা : যদি শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিনের অভাব থাকে, তাহলে রক্ত সঞ্চালন দুর্বল হয়ে যায়। বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব লো প্রেসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অপরিহার্য।
  •  রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) : শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত বা হিমোগ্লোবিন না থাকলে মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, যার ফলে প্রেসার কমে যায়। এটি লো প্রেসারের অন্যতম সাধারণ কারণ। তাই আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার যেমন—বিটরুট, ডালিম, কলিজা ও সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত।

লো প্রেসার হালকা মনে হলেও এটি অবহেলা করার মতো নয়। এর পেছনের কারণগুলো জানা ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার ও মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখলে প্রেসার লো হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। মনে রাখবেন—স্বাভাবিক রক্তচাপ মানেই সুস্থ জীবন।

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ 

উচ্চ রক্তচাপ যেমন নানা জটিলতা সৃষ্টি করে, তেমনি নিম্ন রক্তচাপ বা প্রেসার লো হলেও শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ কমে যায়, ফলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এ সময় শরীর কিছু স্পষ্ট সংকেত দেয়, যেগুলো লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় রক্তচাপ কমে যাচ্ছে। নিচে প্রেসার লো হওয়ার সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো—

  • শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত লাগা : প্রেসার লো হলে শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছায় না। এতে সারাদিন দুর্বল, অলস ও ক্লান্ত লাগে। কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায় এবং শক্তিহীন অনুভব হয়।
  • মাথা ঝিমঝিম করা বা ঘোরানো : লো প্রেসারের অন্যতম প্রথম লক্ষণ হলো মাথা ঘোরা। বিশেষ করে বসা বা শোয়া অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে মাথা ঝিমঝিম করতে পারে বা অন্ধকার দেখা যেতে পারে। এটি মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়।
  • হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া : রক্তচাপ কমে গেলে শরীর পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের জন্য হার্টকে দ্রুত কাজ করতে বাধ্য করে। ফলে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, বুক ধকধক করা বা হালকা বুকে চাপ অনুভব হতে পারে।
  • হঠাৎ দাঁড়ালে ভারসাম্য হারানো : লো প্রেসারের কারণে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়। ফলে হঠাৎ দাঁড়ানোর সময় মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানোর মতো সমস্যা দেখা দেয়। এটি “অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন” নামে পরিচিত একটি সাধারণ উপসর্গ।
  • চোখে ঘোলা দেখা বা অন্ধকার দেখা : প্রেসার লো হলে চোখে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছানোর কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। অনেক সময় হঠাৎ করে অন্ধকার দেখা বা চোখের সামনে ঝলমলে দাগ দেখা যায়।
  • পিপাসা বেশি লাগা : শরীরে পানিশূন্যতা লো প্রেসারের প্রধান কারণগুলোর একটি। তাই এই সময় পিপাসা বেশি লাগে এবং মুখ শুকিয়ে যায়। এটি শরীরের ইঙ্গিত যে দ্রুত তরল গ্রহণ করা প্রয়োজন।
  • হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া : রক্তচাপ অত্যন্ত নিচে নেমে গেলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যায়, যার ফলে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এটি লো প্রেসারের সবচেয়ে গুরুতর লক্ষণগুলোর একটি, এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
  • হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া : রক্ত চলাচল ধীর হয়ে গেলে শরীরের প্রান্তীয় অংশে (হাত-পা, আঙুল) রক্ত পৌঁছানো কমে যায়। এর ফলে হাত-পা ঠান্ডা বা ঝিনঝিন ভাব দেখা দিতে পারে।

প্রেসার লো-এর লক্ষণগুলোকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এই উপসর্গগুলো শরীরের সতর্ক সংকেত যে, রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় নেই। তাই এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশ্রাম নিন, পানি বা স্যালাইন পান করুন এবং সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন — সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লেখকের শেষ মন্তব্য : প্রেসার লো হলে করণীয় 

প্রেসার লো হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে আশা করি জানতে পেরেছেন। প্রেসার লো বা নিম্ন রক্তচাপ অনেকেই তেমন গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এটি শরীরের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। কারণ রক্তচাপ কমে গেলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলো পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পায় না, ফলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই শরীরটা দুর্বলতা, মাথা ঘোরা 

চোখে ঝাপসা দেখাবা হাত পা ঠান্ডা লাগার মত লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জরুরী। পর্যাপ্ত পানি পান, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা এই কয়েকটি সহজ অভ্যাস লো প্রেসার প্রতিরোধ সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন, রক্তচাপ স্বাভাবিক মানুষ জীবন স্বাভাবিক। তাই সচেতন থাকুন, নিজের ও পরিবারের সুস্থতা নিশ্চিত করুন। 

আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন, তাহলে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার-পরিজনের মাঝে শেয়ার করে দিবেন যাতে তারা উপরে উপকৃত হয়। আশা করছি এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক উপকার পাবেন। আজকে এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ🥰

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নাক্ষোমা এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url