অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয় - কারণ ও সমাধান জানুন
অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয় তা জানুন বিস্তারিত। আয়রন, ভিটামিন বি১২ ও ফলিক এসিডের ঘাটতির কারণে কেন অ্যানিমিয়া হয় এবং এর প্রতিকার কিভাবে সম্ভব, সহজ ভাষায় এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতার ব্যাপারে কম বেশি অনেকেই শুনেছেন। অ্যানিমিয়া রোগকে অনেকে সাধারণ রোগ মনে করে কিন্তু অ্যানিমিয়ার লক্ষণ স্বাভাবিক জীবনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই আজকের পোস্টে অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয় সেই সম্পর্কিত সকল বিস্তারিত তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। আশা করি আপনারা ধৈর্য সহকারে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
পেজ সূচিপত্র : অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়
- অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়
- অ্যানিমিয়া রোগ কি
- অ্যানিমিয়া কত প্রকার ও কি কি
- রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
- অ্যানিমিয়ার লক্ষণ
- অ্যানিমিয়া হলে কি হয়
- অ্যানিমিয়া মোকাবেলায় কিছু ঘরোয়া টিপস
- অ্যানিমিয়া সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
- লেখকের শেষ মন্তব্য : অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়
অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়
অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয় এ সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে। যেকোনো রোগ
অবশ্যই কোনো না কোনো ভিটামিনের বা পুষ্টির ঘাটতির কারণেই হয়ে থাকে। অ্যানিমিয়া
মূলত একটি মারাত্মক রোগ। এটি রক্তের একটি রোগ যা রক্তে থাকা অক্সিজেন বহন করার
ক্ষমতাকে অনেক বেশি কমিয়ে দেয়। এটি মূলত ভিটামিন বি৯, ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতির
সাথে ভিটামিন সি ও অপর্যাপ্ত খনিজের কারণে হয়ে থাকে। এছাড়াও ফোলেট এর অভাব
অ্যানিমিয়ার লুকায়িত একটি কারণ।
রক্তে থাকা লোহিত রক্তকণিকার স্বাভাবিক সংখ্যার থেকে কম হওয়ার কারণেও হয়ে থাকে।
এছাড়া রক্তে থাকা অক্সিজেন বহনের জন্য যে পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের প্রয়োজন তা কমে
যাওয়ার কারণে রক্তে থাকা লোহিত কণিকার রক্ত অক্সিজেন এর পরিবহন ঘটাতে ব্যাঘাত
প্রাপ্ত হয়। ফলে রক্তের উৎপাদন কমে যাওয়ায় রক্তশূন্যতার দেহে জুড়ে বসে যা
রক্তের স্বাভাবিক কার্যক্রম কে বাধাগ্রস্ত করার সাথে নতুন প্রস্তুতি বন্ধ করে
শরীরে নানাবিধ বিপাক ঘটায়।
অ্যানিমিয়া রোগ কি
সাধারণত রক্তে লাল, রক্ত কোষের পরিমাণ ও উৎপাদন হ্রাস পেলে তাকে অ্যানিমিয়া
হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখানে লাল রক্ত কোষ বলতে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কে
বোঝানো হয়। মানব দেহের লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ হ্রাস পেলে শারীরিক
অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়। এই রক্তকণিকা দেহে অক্সিজেন সরবরাহর কাজে লেগে থাকে।
যখন এর পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যায় তখন এটি এর পরিবহন ক্ষমতা কমিয়ে আনে ফলের
শরীরে ব্যাঘাতের সৃষ্টি হয়।
এজন্যই একে রক্তস্বল্পতা সম্পর্কিত রোগ বলা হয়। রক্তে এর প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো
অভাবে রক্তশূন্যতার মতো রোগব্যাধি দেখা মেলে। তাহলে দুর্বলতা আকাশে ভাব অনীহা সহ
আরো কিছু ছোটখাটো সমস্যা একত্রিত হয়ে ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শারীরিক ও
মানসিকভাবে বিরক্তি প্রদান করতে পারে। এক গবেষণায় তথ্য অনুসারে জানা যায় যে,
অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার সমস্যা নারীদের ক্ষেত্রে প্রবল আকারে দেখা পাওয়া
যায়। অ্যানিমিয়া রোগ নারী-৮পুরুষ সকলের হতে পারে তবে গড় গণনা কেবল আক্রান্ত
পুরুষের তালিকায তুলনামূলক কম।
অ্যানিমিয়া কত প্রকার ও কি কি
আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা হ্রাস পেতে থাকলে অ্যানিমিয়ার মত সমস্যা দেহে বাসা
বাঁধতে সুযোগ নেয়। বিভিন্ন কারণে শরীর থেকে এই কণিকার পরিমাণ এবং নির্মাণ কমে
গিয়ে অ্যানিমিয়ার উদ্ভব ঘটতে পারে। অ্যানিমিয়া কয়েক ধরনের হয়ে থাকে।
অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয় এই কারণটির উপর যেমন অ্যানিমিয়ার ধরন গুলি
বিভক্ত করা হয়, ঠিক তেমনি অ্যানিমিয়ার গাঠনিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে
রক্তস্বল্পতা সজলতা নির্মাত তোমাকে বিভক্ত করা হয় -
- মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া : যেহেতু কাঠামোগত দিক থেকে মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া চিহ্নিত করা হয় তাই এর বিবরণীতে এর গাঠনিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত থাকে। অর্থাৎ রক্তের লাল রক্ত কোষ বা লোহিত রক্তকণিকার আকার নিয়মিত এর তুলনায় ধরা পড়ে তখন সেই অবস্থাকে মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া বলে। যেমন - মারাত্মক রক্তশূন্যতা।
- নরমোসাইটিক অ্যানিমিয়া : আমাদের শরীরের রক্ত যখন লোহিত রক্ত কণিকার মূল উপাদান কমতে থাকে, তখন সেই অবস্থাকে লক্ষ্যণীয় করার জন্য একে নরমোসাইটিক অ্যানিমিয়া বলা হয়। এক্ষেত্রে অ্যানিমিয়া স্বাভাবিক স্থিতি গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে অ্যানিমিয়ার এই প্রকারটি বিভক্ত করা হয়। উদাহরণস্বরুপ - আপস্মিক রক্তপাত, ঘা বা কোন ক্ষত।
- সাধারণ মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া : মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া পুরোটাই মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়ার বিপরীত রূপ। মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে লোহিত রক্ত কণিকা গুলো নিয়মিত অবস্থার তুলনায় ক্ষুদ্র কনিকা দ্বারা আবৃত থাকাকে ইঙ্গিত করে।
- মাইক্রোসাইটিক হাইপোক্রমাটিক অ্যানিমিয়া : শরীরের রক্তে লাল রক্ত কোষের পরিবর্তনের সাথে রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার অন্যতম উপাদানের তরল হয়ে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য দেখা দিলে এই অবস্থাকে মাইক্রোসাইটিক হাইপোক্রোমাটিক অ্যানিমিয়া রোগ বলা হয়।
এছাড়াও দেহে বা রক্তের উপাদানের ত্রুটিপূর্ণ রক্ত বা কণিকার উপস্থিতি অথবা
অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয় তার সঠিক ধারণা না থাকা বা রক্তে আয়রনের
বিভিন্ন কারণে বিভক্ত অ্যানিমিয়ার ধরন গুলোসহ অ্যানিমিয়ার আরও কিছু ধরন হলো -
ইন অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, হাইপোক্রোমাটিক
মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া, হেমোলেটিক অ্যানিমিয়া, বংশগত, স্ফেরোসাইটোসিস,
থ্যালাসেমিয়া এবং হিমোগ্লোবিনোপ্যাথি, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া,
পলিসাইথেমিয়া।
রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
রক্তক্ষয় হলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে। অনেকদিন ধরে ধীরে ধীরে শরীর
থেকে যদি রক্তের ক্ষয় ঘটতে থাকে, তাহলে শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ধীরগতিতে
রক্তের এই অপচয় আলসার, ক্যান্সার, মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত অথবা সন্তান
জন্মের সময় রক্তক্ষরণের কারণে হতে পারে। অপর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্নের
কারণেও অ্যানিমিয়া হয়ে থাকে। আর এই অল্প লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্নের পেছনে দায়ী
হলো -
- সিকেল সেল অ্যানিমিয়া : জেনেটিক কারণে লোহিত রক্তকণিকা crescent আকার ধারণ করে, ফলে তারা দ্রুত ভেঙ্গে যায় আর আমরা রক্তশূন্যতায় কবলে পড়ি।
- ভিটামিনের অভাব : ভিটামিন ১২ বা ফোলেটের অভাবে এই সমস্যার শুরু হয়। কারণ এই দুটি ভিটামিন শরীরের রেড ব্লাড সেল উৎপন্ন করে। প্রয়োজনের তুলনায় কম মাংস খেলে শরীরে ভিটামিন ১২ এর অভাব দেখা দেয়। অন্যদিকে সবজি ওভার কুক করলেও তাতে বিদ্যমান ফোলেট থেকে আমরা বঞ্চিত হই।
- আয়রনের অভাব : সাধারণত খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে আমাদের দেশের নারীরা রক্তশূন্যতার শিকার হয়ে থাকেন। অপর্যাপ্ত আয়রনের কারণে রেড ব্লাড সেল এর জন্য আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না। ফলে আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া আমাদের আক্রমণ করে। তাছাড়া ঘনঘন রক্তদান, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহনও শরীরের আয়রনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
- বোনম্যারো এর সমস্যা : হাড্ডির মাঝে থাকা অস্থিমজ্জা হিমোগ্লোবিন তৈরি করার জন্য আয়রনের সাহায্য নেয়। যখন বোনম্যারো রেডিয়েশন, ঔষধ, ইনফেকন, লেড অথবা কেমোথেরাপি দ্বারা ইনজুরি হয় তখন আর প্রয়োজনীয় রেড ব্লাড সেল তৈরি করতে পারেনা। আর তখন একে বলে বোনম্যারো সমস্যা জনিত অ্যানিমিয়া।
অ্যানিমিয়ার লক্ষণ
অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতার উপসর্গ গুলোর উপর ভিত্তি করে অ্যানিমিয়াকে সাধারণ
একটি রক্তের সাথে জড়িত ব্যাধি বলে ধারণা করা হয়। তবে এই ব্যাধি শরীরের
অভ্যন্তরীণ অবস্থার গোলযোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। অ্যানিমিয়ার লক্ষণগুলো খুব
সাধারণ যা আমরা অনেক সময় লক্ষ্য করি না। নিম্নে রক্ত সল্পতা বা
অ্যানিমিয়ার লক্ষণ কয়েকটি উপস্থাপন করা হলো -
- অল্পতেই ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত হওয়া
- দীর্ঘকালীন ক্ষীণতা বা শক্তিহীনতার দেহে ভর করা
- খুদা অনুভূত না হওয়া
- অস্থিগুলোতে আকস্মিক বা স্থায়ী ব্যথা অনুভব
- বুক ব্যথার ও দেহের বহিরাগত অনুগত অংশে ভঙ্গুরা চলে আসে
- এজমা জাতীয় সমস্যা
- অকারণে ও অসময়ে মাথা ধরা
- বমি বমি ভাব
- গায়ের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়
- দৃষ্টিশক্তি কমে যায়
- সর্দি কাশির প্রবণতা
- ওজন কমে যায় /ওজন বেড়ে যাই কখনো কখনো
- নখ হলদেটে হয়ে যায়
- হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়
- স্মৃতিভ্রষ্ট
- ক্লান্ত এবং দুর্বল লাগা
- ত্বক ফ্যাকাসে হওয়া
অ্যানিমিয়া হলে কি হয়
অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা ব্যক্তি ভেদে বিভিন্ন রকম কারণ ও লক্ষণ প্রকাশ করে
থাকে। বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের ধারণায় সাধারণত অপর্যাপ্ততাই দেহে অ্যানিমিয়া
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয় তার যেকোনো একটি
পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিনের উপর নির্ভরশীল নয়। অ্যানিমিয়া হলে দেহে বিভিন্ন রকম
অস্থিতিশীলতা দেখা যায় যা কিছুটা দেহের অভ্যন্তরীণ অংশ থেকে আসে বাকিটা বহিরাগত
অস্থিতিশীলতা হয়।
প্রাথমিকভাবে দেহে পুষ্টিকর উপাদান প্রস্তুতির জন্য হার্টে রক্ত একটু বেশি দরকার
হয় বা রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
অ্যানিমিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের অ্যানিমিক বলে অভিহিত করা হয়। তাই এক্ষেত্রে বলা
হয় এনিমিক রোগী শিশু-কিশোর কিংবা মধ্য বয়সি বা প্রবীণ যে কেউ হতে পারেন। তবে
শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ফলে তাদের শারীরিক গঠন ও
বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে তারা নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকেন।
অ্যানিমিয়া হওয়ার ফলে এ সকল এনিমিক রোগীদের অস্থি এবং অস্থির বিভিন্ন জোড়া
গুলিতে সার্বক্ষণিক পীড়ণ অনুভব করেন। তাছাড়া অ্যানিমিয়া হলে ব্যক্তিদের দেখতে
ফেকাসে লাগে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে ক্ষীণতা এবং ক্লান্তি ভাব অতিরিক্ত
বা প্রসারিত ভাবে মাথা ধরা এবং অবসাদ দেহে বাসা বেধে নেই।
অ্যানিমিয়া মোকাবেলায় কিছু ঘরোয়া টিপস
অ্যানিমিয়া মোকাবেলায় কিছু ঘরোয়া টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো নিচে -
- ভিটামিন সি খাদ্য থেকে আয়রন শোষণের সাহায্য করে। টমেটো, লেবু, টক জাতীয় ফল, ক্যাপসিকাম এগুলো ভিটামিন সি এর ভালো উৎস।
- খাদ্য তালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যেমন মাংস, মাছ, বাদাম, সবুজ শাকসবজি, কচু, কলিজা এসব খাবার প্রচুর পরিমাণে খাবেন।
- ইস্পিরিলুনা একটি নীলাভ সবুজ algae যা অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য উপকারী। ডেইলি এক চা চামচ রসই যথেষ্ট। তবে আজকাল ক্যাপসুল আকারেও ইস্পিরিলুনা পাওয়া যায়।
- কফি, চা রেড ওয়াইন আয়রন শোষণে বাধা দান করে। তাই আমাদের যাদের অ্যানিমিয়া আছে তাদের এসব পানীয় পরিহার করাই স্বাস্থ্যসম্মত।
- ইপসম লবণের নাম অনেকেই হয়তো শুনেছেন। আধা বালতি পানিতে দুই টেবিল চামচ ইপসম লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। দেখবেন অনেকটা উপকার পাচ্ছেন।
- প্রতিদিন এক চা চামচ মধু আর এক চা চামচ ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করুন। আপনি চাইলে এই সবগুলো একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। মধুতে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার আছে।
- প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি ১২ আর ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। কমলা, কলা, মটরশুটি দুগ্ধ জাত খাদ্য, ডিম এইগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি ১২ আর ফোলেট আছে।
- অ্যানিমিয়ার রোগীর জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে সবচেয়ে উপকারী চিকিৎসা হলো হাত বা পা ম্যাসাজ করা। এতে করে শরীরের রক্ত চলাচল সঠিক উপায়ে হবে।
- আয়রন দিয়ে বানানো পাত্রে রান্না করার চেষ্টা করুন। এটা প্রমাণিত হয়েছে এসব পাত্রে রান্না করা খাবারে আয়রনের পরিমাণ অনেকখানি বেড়ে যায়।
- এক কাপ আপেলের সাথে এক কাপ বিটরুট জুস আর চিনি মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে খান।
- আপেল আর টমেটোর জুস ও এনিমিক রোগীর জন্য ভালো।
- একটি পাকা কলার সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খাবেন। এভাবে প্রতিদিন দুটি করে কলা মধুর মিশ্রণে খেতে হবে। আমরা সবাই জানি কলাতে অনেক আয়রন আছে সেই সঙ্গে মধুও যোগ করা হলো। তাহলে এর থেকে পুষ্টিগুণ খাবার একজন রক্তশূন্যতায় রোগীর জন্য আর কি কিছু আছে।
আসলে অ্যানিমিয়া সারার মূল মন্ত্রতন্ত্র খাবারের মধ্যেই নিহিত আছে। আপনি যদি
রক্তশুন্যতাই ভোগে থাকেন তাহলে সবার আগে নজর দিবেন আপনার প্রতিদিনের খাদ্য
তালিকায়। আর চেষ্টা করবেন অ্যানিমিয়া আক্রান্ত হওয়ার পর এর প্রতিকার না
খুঁজে প্রথম থেকে এই প্রতিরোধ গড়ে তোলার। কারণ একবার কোনো অসুখ-বিসুখে জড়িয়ে
গেলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সত্যিই অনেক কষ্টকর। আর বুবু মায়েদের বলছি সঠিক
নিয়মে খাওয়া-দাওয়া করুন না হলে এর প্রভাব আপনি এবং আপনার অনাগত সন্তান
দুজনের ওপরেই পড়বে।
অ্যানিমিয়া সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন : অ্যানিমিয়া হলে শরীরে কি হয়?
উত্তর : অ্যানিমিয়া হলে শরীরের রক্তের লোহিত কণিকা কমে যায়, ফলে শরীরে অক্সিজেন
সঠিকভাবে পৌঁছায় না। এতে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে
পারে।
প্রশ্ন : অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়?
উত্তর : সাধারণত আয়রন, ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক এসিডের অভাবে অ্যানিমিয়া হয়।
এদের ঘাটতি পূরণ করলে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রশ্ন : অ্যানিমিয়ার জন্য কি ধরনের খাবার খেতে হবে?
উত্তর : আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন - লাল মাংস, কলিজা, ডিম, পালং শাক, বাদাম,
খেজুর, আপেল ইত্যাদি খাওয়া উচিত। সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেলে আয়রন দ্রুত
শোষিত হয়।
প্রশ্ন : অ্যানিমিয়া কি সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়?
উত্তর : হ্যাঁ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ভিটামিন ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট এবং প্রয়োজনীয়
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে এনিমিয়া নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়
করা যায়।
প্রশ্ন : অ্যানিমিয়া হলে কবে ডাক্তার দেখানো উচিত?
উত্তর : দীর্ঘদিন ক্লান্তি, অতিরিক্ত মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট বা ত্বক ফ্যাকাসে হলে
অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত।
লেখকের শেষ মন্তব্য : অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়
আশা করি আজকের পোস্টের মাধ্যমে আপনারা অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়, কারণ,
লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু জানতে পেরেছেন। আশা করছি এই
পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন। আর্টিকেল সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আপনার
গুরুত্বপূর্ণ কোন মতামত আমাদের জানাতে চান,
তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে
সকলকে অ্যানিমিয়া রোগ এবং এর অভাবজনিত কারণ সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন।
এতক্ষণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ🥰
নাক্ষোমা এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url