গ্রিন টি তৈরির নিয়ম ও এর অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
গ্রিন টি তৈরির নিয়ম, আসল গ্রিন টি চেনার উপায়, উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন। ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক নিয়ম, সকালে বা রাতে খাবার উপকারিতা, আদা দিয়ে গ্রিন টি পান করার সুবিধা এবং সংরক্ষণ ও দাম সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ গাইড একসাথে।
গ্রিন টি এর সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। কিন্তু এটি তৈরির সঠিক নিয়ম আমাদের বেশিরভাগ লোকেরাই জানা না থাকাই আমরা জানার আগ্রহ প্রকাশ করি। বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা গ্রহণ করার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত গ্রিন টি ব্যবহার করে থাকি। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্র : গ্রিন টি তৈরির নিয়ম
- গ্রিন টি তৈরির নিয়ম
- আসল গ্রিন টি চেনার উপায়
- গ্রিন টি তে কি কি উপাদান থাকে
- গ্রিন টি এর উপকারিতা
- গ্রিন টি এর অপকারিতা
- ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
- খালি পেটে সকালে গ্রিন টি পানের প্রভাব
- ঘুমানোর আগে রাতে গ্রিন টি খাওয়ার ফলাফল
- আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা
- গ্রিন টি সংরক্ষণের পদ্ধতি
- লেখক এর শেষ মন্তব্য : গ্রিন টি তৈরির নিয়ম
গ্রিন টি তৈরির নিয়ম
গ্রিন টি তৈরির নিয়ম খুবই সহজ। যে কেউ খুব সহজে গ্রিন টি তৈরি করে ফেলতে পারে। তবে আমরা যে সাধারণ চা বানাই তার চেয়ে সামান্য পরিমাণ পার্থক্য রয়েছে। গ্রিন টি তৈরি করতে আপনার প্রয়োজন হবে গ্রিন টি পাতা বা টি ব্যাগ ও গরম পানি। তার সাথে ঐচ্ছিকভাবে আপনি মধু অথবা লেবুর রস যোগ করতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যায় গ্রিন টি তৈরির নিয়ম সম্পর্কে -
- প্রথমেই আপনাকে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন পানি যেন অতিরিক্ত গরম না হয়।
- পানির তাপমাত্রা ৭৫ ডিগ্রি থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখলে ভালো হয়। মনে রাখবেন সরাসরি ফুটন্ত পানি চা পাতার উপরে না দেওয়াই ভালো হবে।
- ফুটন্ত গরম পানি নামিয়ে নেওয়ার পরে একটি চায়ের কাপে ১ থেকে ২ চামচ চা পাতা অথবা একটি ব্যাগ দিবেন।
- এরপর গ্রিন টি পাতার উপর গরম পানি আস্তে আস্তে ঢেলে দিবেন। পানি দেওয়ার পর দুই থেকে তিন মিনিট রেখে দিবেন।
- খুব বেশিক্ষণ সময় ভিজিয়ে রাখবেন না। এতে করে চা তিতা হয়ে যেতে পারে।
- কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর যদি ব্যাগ ব্যবহার করেন তাহলে তা সরাসরি উঠিয়ে ফেলবেন, আর যদি পাতা ব্যবহার করেন তাহলে তা ভালো করে ছেকে নেবেন।
- এরপর আপনি তা সরাসরি পরিবেশন করতে পারেন। আপনার ইচ্ছামত এর সাথে মধু অথবা লেবুর রস যোগ করতে পারেন। যা চা এর চা স্বাদ বৃদ্ধি করবে।
- গ্রিন টি এর সাথে চিনি যোগ না করাই ভালো। কারণ এতে গ্রিন টির স্বাস্থ্য গুণ কমিয়ে দিতে পারে।
আসল গ্রিন টি চেনার উপায়
গ্রিন টি তে কি কি উপাদান থাকে
- গ্রিন টিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- আরো থাকে ক্যাফেইন
- এল থিনানাইন
- ফ্লাভোনয়েডস
- পলিফেনালস
- ট্যানিনস
- ক্লোরোফিল
- থিয়ব্রোমিন
- স্যাপোনিন্স
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি২ বি৩
- ভিটামিন ই
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাশিয়াম, জিংক ইত্যাদি
গ্রিন টি এর উপকারিতা
- গ্রিন টি আমাদের শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরের ওজন কমানোর সহজ হয়।
- বিশেষ করে পেটের চর্বি কমাতে বেশ কার্যকরী। তবে গ্রিন টি খেলে যে ওজন কমবে এমনটা নয়।
- গ্রিন টি তে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এর শরীরের কোষ কে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যর প্রভাব কমায়।
- গ্রিন টি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তনালির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে যার ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় যা ডায়াবেটিস ২ এর ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
- গ্রিন টি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- গ্রিনটিতে থাকে পলিফেনাল যা কোষ কে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে। ব্রণ ও ত্বকের জন্য গ্রিন টি অনেক বেশি উপকারী।
- এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে ইত্যাদি।
গ্রিন টি এর অপকারিতা
- যেহেতু ওজন কমানোর জন্য খালি পেটে গ্রিন টি খেতে হয়, তাই অনেক সময় খালি পেটে গ্রিন টি খেলে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যায়।
- খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার কারণে বমি বমি ভাব দেখা যায়।
- অনেক সময় খালি পেটে গ্রিন টি খেলে পেটব্যথা জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
- বেশি গ্রিন টি খাওয়ার কারণে শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যায়।
- অতিরিক্ত গ্রিন টি খেলে রক্তের চাপ বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত গ্রিন টি খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যায়।
- আলসার আক্রান্ত রোগী গ্রীন টি খেলে আনসার আরো বেড়ে যেতে পারে।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
খালি পেটে সকালে গ্রিন টি পানের প্রভাব
- শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখে
- উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়
- হৃদরোগের ঝুকি কমে যায় সকাল বেলা খালি পেটে গ্রিন টি খেলে
- স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
- ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- মেদ কমাতে সাহায্য করে
- অতিরিক্ত গ্রিন টি খেলে বমি বমি ভাব হতে পারে
- পেট ব্যথা করে তো সমস্যা হতে পারে
- বদজন হতে পারে
ঘুমানোর আগে রাতে গ্রিন টি খাওয়ার ফলাফল
আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা
- ওজন কমাতে সাহায্য করে : ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায় হচ্ছে আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়া। কারণ আদা দিয়ে গ্রিনটি খেলে হজম শক্তি বেড়ে যায় যার ফলে দ্রুত খাবার হজম হয়ে যায়। আর দ্রুত হজম হওয়ার জন্য প্রচুর ক্যালরি খরচ হয়। আর এভাবেই ক্যালরি খরচ হওয়ার মাধ্যমে ওজন কমে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : গ্রিন টি এমন একটি চা যা নিয়মিত পান করার কারণে প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।
- হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমায় : আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত আদায় গ্রিন টি খেতে পারেন তাহলে এ গ্রিন টি তে থাকা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো আপনাকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
- স্মৃতিশক্তি বাড়ায় : আদা দিয়ে গ্রিন টি খেলে প্রত্যেক মানুষের স্মৃতিশক্তি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়।
- শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল করে রাখে : গ্রিন টির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যামান থাকে। যা একজন মানুষের শরীরকে সতেজ এবং উৎফুল্ল করতে সাহায্য করে।
- শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে : আদার মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা নাশক ওষুধ বিদ্যমান আছে। যার ফলে গ্রিন টির সঙ্গে আদা খাওয়ার কারণে শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যথা নিবারণ হয়। এছাড়াও আধা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কোর্সগুলোকে ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
- ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে : থিয়ানিন অ্যামাইনো এসিড গ্রিন টি এর মধ্যে বিদ্যামান আছে। যা একজন মানুষের ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে বিদ্যালয় আছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- হজন শক্তি বাড়িয়ে দেয় : আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়ার কারণে প্রত্যেকটি মানুষের হজম শক্তি বেড়ে যায়। কারণ আদার মধ্যে আছে হজম শক্তি বৃদ্ধি কারক উপাদান।
- মেদ কমাতে সাহায্য করে : কেটাচিন নামক এক ধরনের পদার্থ আদার মধ্যে বিদ্যামান আছে। যে পদার্থ মানুষের মেদ কমাতে সাহায্য করে। যদি নিয়মিত আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়া যায় তাহলে নিশ্চিত ভাবে আপনার মেদ কমে যাবে।
গ্রিন টি সংরক্ষণের পদ্ধতি
- প্রথমত যে বিষয়টি তা হচ্ছে এই গ্রিন টি যদি আপনি কাচের জারে করে রাখেন তাহলে এটি দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
- আরেকটি বিষয় দিক লক্ষ্য করে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে আদ্রতা। আদ্রতা চা পাতার সবচেয়ে বড় শত্রু।
- তাই চা পাতা অবশ্যই শুষ্ক স্থানের সংরক্ষণ করবেন
- খেয়াল রাখবেন যাতে চা পাতা অন্যান্য কোন গন্ধযুক্ত জিনিসের আশেপাশে না রাখা হয়। অন্যথায় এর স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন হতে পারে।
- সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে খুব বেশি আলো রয়েছে এমন জায়গায় গ্রিন টি সংরক্ষণ করবেন না। এতে করে গ্রিন টি এর গুণগত মান হ্রাস পায়।
- অনেকে মনে করেন চা পাতা ফ্রিজে রাখলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। কিন্তু এটি মোটেও করবেন না। যখন এটি ফ্রিজ থেকে বের করা হয় তখন তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে গুণগত মানের কম বেশি হতে পারে।

নাক্ষোমা এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url