কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা - জানুন ১০টি উপকারিতা

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করতে চাচ্ছেন। রূপচর্চা করে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে বর্তমানে। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সবাই রূপচর্চা করে নিজেকে আকর্ষণীয় করতে চাই। কিন্তু কলার খোসা দিয়ে যে রূপচর্চা করা যায় অনেকেই তা জানেন না। চলুন বিস্তারিত আলোচনা করি।

কলার-খোসা-দিয়ে-রূপচর্চা

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করে আপনি অনেক উপকৃত হতে পারবেন। কেননা আমরা তো শুধু মাত্র কলা খাই কিন্তু খোসাটা ফেলে দেই। কলার খোসার মধ্যে যে কি পরিমান উপকারিতা আছে আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা এবং এর ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানব। 

পেজ সূচিপত্র : কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা 

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা 

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করা যায়। আমরা শুধু কলা খাই কিন্তু কলার খোসা ফেলে দেই। এই কলার খোসায় হতে পারে আপনার ত্বকের সমস্যার সমাধান। কেননা কলার খোসাতে রয়েছে পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন যা আপনার ত্বককে করে তুলবে উজ্জল এবং মসৃণ। কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করা যায়, অনেকেই তা জানেন না। এই কলার খোসা ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন উপায় আছে। কলার খোসা যদি আপনি সঠিকভাবে ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।

কলার-খোসা-দিয়ে-রূপচর্চা

কলার ভিতরে যে সাদা অংশটা আছে সেটা আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। আপনি যদি প্রতিদিন ঘরোয়া উপায়ে কলার খোসা ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ত্বকের যত সমস্যা আছে সব দূর হয়ে যাবে। কলা খেলে যেমন উপকৃত হন, তেমনি কলার খোসা ব্যবহার করলেও আপনার রূপচর্চায় অনেক উপকৃত হবেন। তাই আমরা রূপচর্চা করার জন্য কলার খোসাকেই বেছে নিতে পারি। কিভাবে কলার খোসা ব্যবহার করা যায় রূপচর্চায় দেখে নেই। 

  • ডার্ক সার্কেল দূর করবে : আমার চোখের নিচে কালো দাগ জমে গেছে, ভিতরের অংশটা চোখের নিচে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করবে। 
  • ব্রণের চিকিৎসায় কলার খোসা : আপনি যদি ব্রণের চিকিৎসার জন্য কলার খোসা ব্যবহার করেন, তাহলে গলার ভিতরের সাদা অংশটা ব্রণের ওপর ঘষুন। নিয়মিত এটা ব্যবহার করলে আপনার ব্রণের সমস্যা দূর হবে। 

কলার খোসায় থাকা পুষ্টিগুণ সমূহ 

কলার খোসায় থাকা পুষ্টিগুণ অনেক, যা আমাদের ত্বকের জন্য ও স্বাস্থ্যের জন্য অমূল্য। আমরা কিন্তু কলাটা খেয়ে খোসাটা ফেলে দেই। এই কলার খোসাও কিন্তু আমাদের জন্য অনেক উপকারিতা। আমরা কেউ চিন্তাই করতে পারিনি যে ফেলে দেওয়া খোসার মধ্যে এত উপকারিতা আছে বা অনেক কাজে ব্যবহার করা যায়। কলার খোসায় রয়েছে ফাইবার, যা হজম শক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। কলার খোসায় থাকা পুষ্টিগুণ হলো - কলার খোসার মধ্যে রয়েছে ১২ ভাগ আঁশ যা হজমে সাহায্য করে, এতে রয়েছে ১৭ ভাগ ভিটামিন সি, ১২ ভাগ পটাশিয়াম রয়েছে কলার খোসায়, ২০ শতাংশ ভিটামিন বি -৬ রয়েছে কলার খোসার মধ্যে, কলার খোসার মধ্যে রয়েছে ৮ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম, যা শরীরের মধ্যে শক্তি যোগায়। পাশাপাশি এটি আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং গ্লুকোজ কেও নিয়ন্ত্রণ রাখে। 

কলার খোসা মুখে দিলে কি হয় 

কলার খোসা মুখে দিলে অনেক উপকৃত হবেন আপনি। কলার খোসা ত্বকের যত্নে অনেক কার্যকরী। অনেকের মুখে অনেক সমস্যা থাকে, সেই সমস্যার সমাধান করতে চাইলে কলার খোসা হতে পারে আপনার জন্য দারুণ একটি উপায়। কলার খোসার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এবং অনেক পুষ্টি। কলার খোসা অনেক নরম, তাই এটি ত্বকে ব্যবহার করলে কোন খারাপ কিছু হবে না। বরং আপনি উপকৃত হবেন কলার খোসা মুখে ব্যবহার করলে।  চলুন দেখে নেই মুখে কলার খোসা দিলে কি হয়?

আরো পড়ুন ঃ হিমালয়া নিম ফেসওয়াস ব্যবহারের নিয়ম

  • আপনার ত্বকে যদি খসখসে ভাব থাকে তাহলে তা কমে যাবে, তারপর আপনার ত্বককে নরম ও তুলতুলে করে তুলবে। 
  • কলার খোসা আপনার ত্বককে সুরক্ষিত করবে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে। 
  • আপনার ত্বকে যদি অযাচিতয আঁচিল থাকে, তাহলে সেটা দূর করতে সাহায্য করবে। 
  • আপনার ত্বকে যদি কোথাও দাগ থেকে থাকে, তাহলে সেটা নিমিষেই দূর করতে সাহায্য করবে। 
  • আপনি যদি ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে এ সমস্যা থেকে পুরোপুরি পরিত্রাণ পাবেন। 

চুলের যত্নে কলার খোসা 

চুলের যত্নে খোসার ব্যবহার। এতক্ষণ আমরা জানলাম করার খোসা মুখে দিলে কি হয়। এখন আমরা জানবো চুলের যত্নে কলার খোসা কতটা উপকারী। আমরা অনেকেই চুলের যত্নে কলার খোসা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করব তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। কলার খোসা একটি প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য উপাদান। 

  • চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি : চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কলার খোসা অনেক সহায়তা করে। এর জন্য প্রথমে আপনাকে কলার খোসাটাকে ব্লেন্ড করে নিতে হবে সাথে ডিমের সাদা অংশ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে হবে। এটি দেয়ার পর ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে। এটি আপনি মাসে একবার কি দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। 
  • চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে : চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে কলার খোসা। এটি ব্যবহারের ফলে চুল হবে আপনার দ্রুত লম্বা এবং গোড়া হবে শক্ত। তার জন্য আপনাকে কলার খোসার সাথে দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এবং এটা আপনার চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। এরপর আপনি ৩০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। তারপর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিবেন। এটি আপনি সপ্তাতে একদিনও ব্যবহার করতে পারেন কোন সমস্যা নাই। 
  • চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে : চুলের খুশকি দূর করতে কলার খোসা সাহায্য করে। খুশকি দূর করার জন্য আপনাকে কলার খোসা ব্লেন্ড করে নিতে হবে এবং এর সাথে আপনি এক চামচ মধু ও এক চামচ নারকেল তেল দিয়ে পেস্ট তৈরি করতে পারেন। পেস্টটি তৈরি হয়ে গেলে পুরো মাথাই ব্যবহার করুন এবং ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটা যদি আপনি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন। 

কলার খোসার ১০ টি উপকারিতা 

কলার খোসার উপকারিতা অনেক। যুগ যুগ ধরে ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে কলার খোসা। আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কলা খেয়ে থাকি এবং এটি উপকারিতাও পায় আমরা। কলা খেয়ে খোসা ফেলে দেই, কিন্তু আমরা যদি জানতাম কলার খোসার উপকারিতা অনেক তাহলে হয়তো আর কখনোই কলার খোসা ফেলে দিতাম না। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর দশটি উপকারিতা - 

  1. দাঁত পরিষ্কার করতে কার্যকরী : দাঁত পরিষ্কার করতে কলার খোসার কার্যকরী অনেক। আমাদের দীর্ঘদিন জমে থাকা দাঁতের হলদে ভাব অথবা কালো রং দূর করতে কলার খোসা দিয়ে দাঁত মাজতে পারেন। এটি ব্যবহার করলে আপনার দাঁত হবে ঝকঝকে এবং সাদা। 
  2. ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে : ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে কলার খোসা অনেক উপকারে আসে। আমাদের অনেকের ত্বক শুষ্ক এবং খসখুসে। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে দেখবেন আপনার ত্বক খুব শীঘ্রই মসৃণ এবং তুলতুলে হয়ে যাবে। 
  3. চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে : নিচে কালো দাগ দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। কেননা অনেক গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে, চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে কলার খোসা অনেক সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে কলার খোসার সাথে এলোভেরা মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখবেন তাহলে অনেক উপকারিতা পাবেন। তাই আপনিও কলার খোসা ব্যবহার করে আপনার চোখে নিজের কালো দাগ দূর করতে পারেন। 
  4. আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে : আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে কলার খোসা। আঁচিল কিন্তু সব মানুষের একটা বিরক্তকর বিষয়। আপনি যদি আঁচিল দূর করতে চান তাহলে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। কলার খোসা আঁচিলের ওপর লাগিয়ে রাখুন তারপর কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন এটি নিয়মিত একবার হলেও ব্যবহার করতে হবে। তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি ফলাফল পাবেন।
  5. চোখের অবসাদ দূর করতে : চোখের অবসাদ দূর করতে কলার খোসার ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এটি চোখের ক্লান্তি এবং আপনার অবসর দূর করতে পারে এবং পাশাপাশি যাদের চুলকানি এবং চোখে ছানি আছে তারাও রক্ষা পেতে পারেন। 
কলার-খোসা-দিয়ে-রূপচর্চা
  1. ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে : ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে কলার খোসা। ব্রণ দূর করতে চাইলে আপনি সারারাত ব্রণের ওপর কলার খোসা লাগিয়ে রাখেন, তাহলে দেখবেন এক রাতেই ব্রণ দূর হয়ে যাবে আপনার। সারারাত লাগিয়ে রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এরপর ওই স্থানে আপনার কখনোই ব্রণ উঠবে না। 
  2. মুখের দাগ কমাতে সাহায্য করে : মুখের দাগ কমাতে সাহায্য করে কলার খোসা। আপনার যদি মুখে দাগ থেকে থাকে, তাহলে প্রতিদিন আপনি কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন মুখে। এতে আপনার মুখের দাগ এবং অন্যান্য কালো দাগও দূর হবে। 
  3. ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে : ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে কলার খোসা। আপনি যদি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে কলার খোসার ভিতরের যে সাদা অংশটা আছে তা আপনার ত্বকে ঘষলে ত্বক অনেক প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা পায়। 
  4. বলিলেখা দূর করতে : বলি রেখা দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। কলার খোসা আপনার ত্বকের বলিরেখাকে কমাতে সাহায্য করে এবং আপনার ত্বককে টানটান করে তোলে। 
  5. দাদের ঔষধ হিসেবে কাজ করে : দাদের ঔষধ হিসেবে কাজ করে কলার খোসা। যাদের শরীরে অতিরিক্ত চুলকানি হয় দাদ মোকাবেলা করতে চান তারা প্রতিদিন কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার চুলকানি অনেকটাই কমে যাবে। 

কলার খোসার অপকারিতা 

কলার খোসার অপকারিতা। আমরা সবাই এতক্ষণ জানলাম কলার উপকারিতা সম্পর্কে। কিন্তু আমরা কেউ জানি না কলার খোসার অপকারিতা সম্পর্কে। সবকিছুর উপকারিতা আছে, তবে যদি অতিরিক্ত ব্যবহার করে ফেলি আমরা তাহলে এর অপকারিতাও আছে। আমি যখন একবার ব্যবহার করেছিলাম অতিরিক্ত তখন আমার ত্বকে চুলকানি এবং রাশের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল তাদের জন্য এটা অতিরিক্ত ব্যবহার না করাই ভালো।

আরো পড়ুন ঃ পেয়াজের উপকারিতা চুলের জন্য

কারণ এটা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়, যার ফলে ত্বককে শুষ্ক করে দেয়। যা সবার জন্য অস্বস্তিকর একটা বিষয়। এছাড়াও কলার খোসা যদি ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করেন তাহলে অনেক সমস্যা হবে, কেননা খোসাটি ভালোভাবে পরিষ্কার না করা হয় এবং রাস্তার ধুলাবালি লেগে থাকে। তাই আমাদেরকে এটি ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন, কেননা ত্বকে ব্যবহার করার আগে সতর্কতা থাকা জরুরী। 

লেখকের শেষ মন্তব্য : কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা 

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করা যায় এতক্ষণ আমরা এর সমস্ত কিছু বিস্তারিত আলোচনা করেছি উপরে। আশা করছি আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবেন। কেননা কলার পাশাপাশি ফেলে দেওয়া কলার খোসাও হতে পারে আমাদের জন্য উপকার। যদি আমরা এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জেনে ব্যবহার করতে পারি। 

তাই সৌন্দর্য লাভের জন্য প্রাকৃতিক উপায়ে কলার খোসা ব্যবহার করুন। এই আর্টিকেল পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে সবাই কমেন্ট করে জানাবেন। এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নাক্ষোমা এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url