*/

ওজন কমাতে শসার উপকারিতা — জানুন কেন শসা ডায়েটে অপরিহার্য

ওজন কমাতে শসার উপকারিতা অসাধারণ। শসা খাওয়ার সঠিক সময়, স্বাস্থ্যের জন্য এর উপকার, কোন রোগে শসা উপকারী, সকালে খালি পেটে শসা খাওয়ার লাভ, অতিরিক্ত শসা খেলে কী হয়—সবই জানতে পারবেন এখানে। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় বা টবে শসা চাষ পদ্ধতি এবং শসা গাছের পোকামাকড় ও রোগবালাই দূর করার উপায়ও পাবেন বিস্তারিত।
ওজন-কমাতে-শসার-উপকারিতা


ওজন কমানোর কথা উঠলেই প্রথম সারিতে যেসব খাবারের নাম আসে, তার মধ্যে শসা অন্যতম। কম ক্যালোরি, প্রচুর পানি ও ফাইবারে ভরপুর হওয়ায় শসা শুধু শরীরকে হাইড্রেট রাখে না, বরং দ্রুত ওজন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শসার উপকারিতা থেকে শুরু করে অতিরিক্ত খাওয়ার ক্ষতি পর্যন্ত সবকিছু একসাথে।

পেজ সূচিপত্র : ওজন কমাতে শসার উপকারিতা 

ওজন কমাতে শসার উপকারিতা 

ওজন কমাতে শসার উপকারিতা অসাধারণ। ওজন বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ ধীরে ধীরে কাজ করে। নিয়মমতো খাবার না খাওয়া, কখনো খুব দেরিতে আবার কখনো একেবারে অসময়ে খাওয়ার অভ্যাস—এসবই শরীরের বিপাকক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব কিংবা দীর্ঘসময় বসে থাকা—এসবও ওজন বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত। তবে যেটি আধুনিক সময়ে সবচেয়ে বেশি নজরে পড়ে, তা হলো অতিরিক্ত ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড খাওয়া। বাইরের খাবারে তেল–চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরে দ্রুত চর্বি জমে ওজনকে অনিয়ন্ত্রিত করে তোলে।

এই বাড়তি ওজন শুধু সৌন্দর্যহানিই ঘটায় না, বরং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা, জয়েন্টে ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টায় ওষুধ সেবন, বিভিন্ন ডায়েট প্ল্যান বা কঠোর ব্যায়াম পদ্ধতি বেছে নেন। কিন্তু সব পদ্ধতি সবার জন্য এক নয় এবং সবসময় নিরাপদও নয়। এ অবস্থায় অনেকেই ওজন কমানোর প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে শসা খাওয়াকে বেছে নেন। শসায় রয়েছে প্রচুর পানি, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ, যা শরীরকে সতেজ রাখে এবং ক্যালোরি কম সাহায্য করে। নিয়মিত শসা খাওয়া হজম শক্তি বাড়ায়, শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে ও পেট ভরা অনুভূত দেয়। 

ফলে ওজন কমাতে এটি একটি সহজ ও কার্যকর খাবার হিসেবে জনপ্রিয়। তবে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন—শসা যতই উপকারী হোক, অতিরিক্ত শসা খাওয়া কখনোই ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত পানি-সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে পেটে গ্যাস, হজমে সমস্যা কিংবা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শসা ক্ষুধা কমিয়ে দিতে পারে, ফলে খাবারের পরিমাণ কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই শসা খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণ বজায় রাখা জরুরি।

অন্যদিকে, সঠিক সময়ে শসা খেলে শরীর যথেষ্ট পুষ্টি পায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সকালে খালি পেটে শসা খেলে শরীর হাইড্রেট থাকে, হজম হয় ভালো, আর পেটও থাকে হালকা। যারা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শসা রাখেন, তারা সাধারণত ত্বক, হজম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ—সব দিকেই ভালো ফল পান। দিনের শেষে একটি কথাই গুরুত্বপূর্ণ—ওজন যেন বাড়তে না পারে, সেদিকে সচেতন থাকা সবারই দায়িত্ব। প্রয়োজন হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং সর্বোপরি কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

শসা খাওয়ার সঠিক সময় 

ওজন কমানোর জন্য শসা খাওয়ার আগে এর উপকারিতা ও সম্ভাব্য অপকারিতা সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। কারণ যেকোনো খাবারের মতো শসারও সঠিক নিয়ম আছে। শসা সহজপাচ্য হলেও অনেক সময় ঠিকমতো হজম হতে কিছুটা সময় লাগে। তাই ঘুমানোর ঠিক আগে শসা খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো। বরং রাতের খাবারের ২০–৩০ মিনিট আগে শসা খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং রাতের খাবারের পরিমাণও স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। এতে ক্যালোরি গ্রহণ কম হয় এবং ওজন কমাতেও সহায়তা করে। শসা কখন খাওয়া উচিত?

আরো পড়ুন ঃ সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

অনেকেই সকালে খালি পেটে শসা খাওয়ার অভ্যাস করেন, কিন্তু এটি সবসময় ভালো নয়। কারণ শসায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম খালি পেটে খেলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে, যা লো ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সকালে খালি পেটে শসা খাওয়ার পরিবর্তে দুপুরে খাবারের সঙ্গে সালাদ হিসাবে বা নাশতায় খাওয়াই উত্তম।

ওজন কমানোর জন্য শসা খাওয়ার আরও একটি দারুণ উপায় হলো—টক দইয়ের সঙ্গে ছোট ছোট শসার টুকরা মিশিয়ে খাওয়া। এটি হজমেও সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। শসার প্রায় ৯৫% পানি, তাই শসা খাওয়ার পর অতিরিক্ত পানি পান করার দরকার হয় না। বরং শসাই শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে পানি সরবরাহ করে। উপরের বিষয়গুলো খেয়াল রেখে প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় শসা রাখলে সহজে ও নিরাপদভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

শসা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী 

শসা শুধু একটি সতেজকারী সবজি নয়; এতে রয়েছে অসংখ্য ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের পুরো শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত শসা খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়, সেগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো—

  • উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে ঃ শসায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, বিটা-ক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তকে পরিশুদ্ধ করে এবং রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
  • দেহের পানি শূন্যতা দূর করে ঃ শসার ৯৫% পানি আমাদের শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করে এবং পানিশূন্যতা দূর করে, বিশেষ করে গরমের সময়।
  • দেহের ভেতরে ও বাইরে তাপ শোষণে সহায়ক ঃ শসা শরীরের অতিরিক্ত গরমভাব কমায় এবং ত্বকেও শীতলতা প্রদান করে। এজন্যই সৌন্দর্যচর্চায় শসার ব্যবহার খুব জনপ্রিয়।
  • শরীরের বিষাক্ততা দূর করে ঃ শসা প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে কিডনি ও লিভারকে সুস্থ রাখে।
  • প্রতিদিনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে ঃ শসায় আছে ভিটামিন এ, বি, সি, কে সহ নানা পুষ্টি উপাদান যা শরীরের দৈনিক ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখে।
  • ত্বক-বান্ধব খনিজের দারুণ উৎস ঃ শসার সিলিকা, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ত্বককে উজ্জ্বল করে, বলিরেখা কমায় এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি ও ওজন কমাতে সহায়তা ঃ শসার ফাইবার হজমশক্তি ভালো রাখে এবং ক্যালোরি কম থাকায় ওজন কমাতে অত্যন্ত কার্যকর।
  • চোখের জ্যোতি বাড়ায় ঃ চোখের ক্লান্তি ও ফোলা ভাব কমাতে শসা অসাধারণ। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখকে সুস্থ রাখে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা ঃ শসায় উপস্থিত লিগন্যান ও কুকুরবিটাসিন ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ঃ শসার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, যা রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • মুখ পরিষ্কার ও শ্বাস সতেজ রাখে ঃ শসা ব্যাকটেরিয়া রোধ করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
  • চুল ও নখকে শক্ত ও সতেজ করে ঃ শসার সিলিকা চুলের বৃদ্ধি বাড়ায় এবং নখে প্রাকৃতিক চকচকে ভাব এনে দেয়।
  • গেঁটে–বাত ও ব্যথা কমায় ঃ শসা প্রদাহ কমায়, ফলে গেঁটে–বাতের ব্যথা হ্রাস পায়।
  • মাথাব্যথা কমাতে সহায়ক ঃ শসার পানিযুক্ত উপাদান ও ভিটামিন মাথার ক্লান্তি দূর করে এবং মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • কিডনি সুস্থ ও সক্রিয় রাখে ঃ শসা কিডনিকে পরিষ্কার রাখে এবং ইউরিন ফ্লো স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

কোন কোন রোগের জন্য শসা খাওয়া উপকারী 

আমরা অনেকেই এতদিন জানতাম না যে শসা শুধু একটি সতেজকারী সবজি নয়, বরং মানবদেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। শসার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে এটি আরও উপকারীভাবে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। চলুন দেখে নিই—কোন কোন রোগে শসা খাওয়া বিশেষভাবে উপকারী। কোন কোন রোগে শসা উপকারী -

কথায় বলে—ডায়াবেটিস থেকে ডায়রিয়া পর্যন্ত সবকিছুতেই শসা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ওষুধ। বিশেষ করে প্রচণ্ড গরমে দেহের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে শসার জুড়ি নেই। এতে থাকা প্রচুর পানি ও মিনারেল শরীরকে দ্রুত সতেজ করে এবং পানিশূন্যতা দূর করে।

  • বদহজম ও হজমজনিত সমস্যা ঃ যাদের বদহজম, এসিডিটি, অরুচি, গ্যাস্ট্রাইটিস বা হজমের দুর্বলতা আছে, তাদের জন্য শসা খুবই উপকারী। এটি লিভার ও প্যানক্রিয়াসকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।
  • গেঁটে–বাত ও হাড়ের রোগ ঃ শসায় উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আর্থারাইটিস, অস্টিওপরোসিস এবং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সহায়ক। ফাইবারের অভাবজনিত কনস্টিপেশন প্রতিরোধেও শসা কার্যকর।
  • হার্টের অসুস্থতা ঃ শসা হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ঃ শসার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি নিরাপদ ও উপকারী।
  • মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের রোগ ঃ বয়স্কদের জন্য শসা বিশেষভাবে উপকারী। এতে থাকা ফিসটিন নামক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ অ্যালঝেইমার্স ও অন্যান্য স্নায়বিক সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি উন্নত করতেও ভূমিকা রাখে।
  • প্রদাহজনিত বিভিন্ন রোগ ঃ শসার প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমিয়ে নানা ধরনের ইনফেকশন, ব্যথা ও প্রদাহজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

শসা খাওয়ার উপকারিতা 

বর্তমান সময়ে শসা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় খুবই সাধারণ একটি সবজি হিসেবে জায়গা দখল করে আছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই সহজলভ্য সবজিটিই মানবদেহের জন্য কতটা উপকারী। আপনি যদি শসাকে শুধু একটি সাধারণ সালাদের অংশ মনে করেন, তবে তা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ শসায় থাকা ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিশেষ কিছু বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান শরীরের বিভিন্ন গুরুতর রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শসার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা—

  • ফাইবার ও পানি–সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরকে হাইড্রেট রাখে ঃ শসায় প্রচুর ফাইবার ও পানি থাকে, যা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে এবং হজমকে স্বাভাবিক রাখে। এতে থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ঃ শসার খোসায় স্টেরল নামক প্রাকৃতিক উপাদান থাকে, যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সহায়তা করে। তাই শসা খোসাসহ খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে উপকারী ঃ শসা কম ক্যালোরিযুক্ত, পানিতে ভরপুর এবং পেট ভরা অনুভূতি দেয়—এই তিন কারণে এটি ওজন কমানো ও নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
  • হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী ঃ শসায় থাকা এরেপনিস নামক বিশেষ এনজাইম হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। এটি প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • শসা বা শসার রস ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী ঃ শসার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শসা নিরাপদ ও উপকারী একটি খাবার।
  • আলসার ও গ্যাস্ট্রাইটিস কমায় ঃ শসার রস পেটের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আলসার কিংবা গ্যাস্ট্রাইটিসের সমস্যা হলে শসার রস প্রশান্তি দেয় এবং এসিডিটি কমায়।
  • ইউরিক এসিড কমাতে সাহায্য করে ঃ গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে ইউরিক অ্যাসিডজনিত ব্যথা, গেঁটে–বাত বা জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে ভালো কাজ করে।

বাড়ির আঙিনায় ও টবে শসা চাষ পদ্ধতি 

শসা আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। শুধু সালাদ নয়, সবজি হিসেবেও শসার ব্যবহার ব্যাপক। শসার প্রায় ৮০%–এরও বেশি অংশ পানি দিয়ে গঠিত, তাই এটি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করে। রূপচর্চাতেও শসার ব্যবহার দীর্ঘদিনের। আজ চলুন জেনে নেওয়া যাক—টবে শসা চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি।

  • জাত নির্বাচন

বাংলাদেশে বর্তমানে নানা ধরনের শসা চাষ করা হয়। অধিকাংশই হাইব্রিড জাত। এছাড়া পটিয়া জায়ান্ট, বিএডিসি বারোমাসি এবং কিছু দেশি জাতও জনপ্রিয়। বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলোও মানসম্মত বেশ কিছু হাইব্রিড জাত বাজারে এনে দিয়েছে।
দেশে সাধারণত যেসব জাত বেশি চাষ হয়—

  1. আলভী

  2. কিরিণ

  3. তিতুমীর

  4. নওগ্রা গ্রীন

  5. হিমেল

  6. গ্রিন ফিল্ড

  7. বাঁশখালি

  8. মধুমতি

  9. শিলা

  10. লাকি–৭

এসব জাত বাড়ির ছাদে, টবে বা খোলা মাটিতে সমানভাবে চাষ করা যায়।

  • চাষের উপযুক্ত সময়

ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ শসা বপনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে হাইব্রিড জাতগুলো সারা বছরই চাষ করা যায়। সাধারণত জাতভেদে শসার জীবনকাল ৭৫ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

  • মাটি প্রস্তুতি

শসা উৎপাদনের জন্য উর্বর বেলে–দোআঁশ মাটি সেরা। টব বা পাত্রের মাটি তৈরি করতে—

  1. ১ ভাগ সাদা বালু

  2. ১ ভাগ মাটি

  3. ১ ভাগ পচা গোবর বা ভালো মানের কম্পোস্ট

ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। চাইলে সামান্য ছাই মিশিয়ে দিলে মাটির উর্বরতা বাড়ে। পাশাপাশি জৈব সার ও সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ফলন আরও ভাল হবে।

  • বীজ বা চারা রোপন
  1. বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে

  2. গর্তের গভীরতা হবে বীজের আকারের প্রায় দ্বিগুণ।

  3. চারা রোপনের সবচেয়ে ভালো সময় বিকেল, এতে চারার মৃত্যুহার কমে।

  4. চারা লাগানোর পর গোড়ার মাটি চাপা দিয়ে টবে পরিমাণমতো পানি দিতে হবে।

  5. টবের নিচে অবশ্যই ছিদ্র রাখতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে।

  • সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা

  1. বীজ গজানোর এক সপ্তাহ পর থেকে তরল সার দিতে হবে।

  2. পাত্রের মাটি অনুযায়ী টবের ধার বরাবর ৫ দানা করে TSP ছিটিয়ে দিতে পারেন।

  3. শসা গাছকে নিয়মিত সকালে ও বিকেলে পানি দিতে হবে।

  4. ছাদে বা টবে চাষ করলে নিয়ম মেনে পরিচর্যা করলে ঘরেই ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

  • তরল সার প্রস্তুত ও প্রয়োগ

টবে শসার জন্য তরল সার অত্যন্ত কার্যকর। প্রস্তুত পদ্ধতি—

  1. আধা লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম সরিষার খৈল ভিজিয়ে ১৫ দিন রেখে দিন।

  2. এরপর ভেজানো খৈল ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে নিন।

  3. সাথে ২ চামচ ইউরিয়া এবং ২ চামচ এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

এই তরল সার নির্দিষ্ট পরিমাণে গাছে প্রয়োগ করলে শসা গাছ সুস্থ থাকে এবং ফলনও বহুগুণ বাড়ে।

আপনি যদি ঘরে বসেই টবে শসা চাষ করতে চান, তবে উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই সতেজ ও স্বাস্থ্যকর শসা সংগ্রহ করতে পারবেন। নিয়মিত পরিচর্যা, সঠিক সার প্রয়োগ এবং সঠিক জাত নির্বাচন—এই তিনটি বিষয় খেয়াল রাখলেই সুন্দর ফলন নিশ্চিত।

শসা গাছের পোকামাকড় ও রোগ বালাই দূর করার উপায় 

শসার সফল চাষের জন্য পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নিই কীভাবে সতর্কভাবে কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে শসা গাছকে সুস্থ রাখা যায়।

শসার পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ

  • পাতা খাওয়া পোকা ও ক্যাটারপিলার :
  1. শসার পাতা ক্ষতিসাধনকারী সুড়ঙ্গকারী পোকা, রেড পামকিন বিটল, ফলের মাছি পোকা এবং টোবাকো ক্যাটারপিলার দমনে সাইবারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। উদাহরণঃ ওস্তাদ (২০ মিলি), ম্যাজিক, কট (১০ মিলি)

  2. ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করুন।

  3. ১০–১২ দিন অন্তর দুই থেকে তিন বার প্রয়োগ করুন।

  4. স্প্রে করার সময় নিরাপত্তা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

  • সাদা মাছি ও জাব পোকা :
  1. শসার সাদা মাছি এবং জাব পোকা দমন করতে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা যায়। উদাহরণঃ এডমায়ার বা টিডো (৭–১০ মিলি)

  2. ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করুন।

  3. ১০ দিন অন্তর দুই থেকে তিন বার প্রয়োগ করুন।

রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ

  • পাউডারী মিলডিউ:

  1. শসার পাউডারী মিলডিউ রোগ দমনে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যায়। উদাহরণঃ কুমুলাস (৪০ গ্রাম), গেইভেট বা মনোভিট (২০ গ্রাম)

  2. এছাড়া কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন **গোল্ডা জিম (৫ গ্রাম), এমকোজিম, কিউবি বা কম্পানিয়ন (২০ গ্রাম)**ও কার্যকর।
  3. ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রমণের শুরু থেকে ১০ দিন অন্তর দুই থেকে তিন বার স্প্রে করুন।
  • টার্গেট স্পট ও গামী স্টিম ব্লেড রোগ:

    1. ম্যানকোজে অথবা ম্যানকোজে + মেটালক্সিল জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন। উদাহরণঃ রেডমিল গোল্ড (২০ গ্রাম)

    2. ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭–১০ দিন অন্তর তিনবার স্প্রে করুন।

  • মোজাইক রোগ:

    1. জমিতে সাদা মাছি বা জাব পোকা দেখা দিলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করুন। উদাহরণঃ এডমায়ার বা টিডো (১০ মিলি) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করুন।

    2. সকালে গাছের উপর ছাই ছিটিয়ে দিলে বাহক পোকা কমে যাবে।

    ফসল সংগ্রহ

    শসার জাত ভেদে বীজ বপনের ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা শুরু করা যায়। নিয়মিত পরিচর্যা, স্প্রে ও সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভালো মানের ফসল নিশ্চিত করা সম্ভব।

    অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয়

    শসা স্বাস্থ্যকর ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক একটি সবজি। তবে বেশি পরিমাণে শসা খাওয়া বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে রাতে শসা খাওয়া সাধারণত এড়ানো উচিত, কারণ এতে পেটে গ্যাস, ফোলা বা হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঠিক পরিমাণে শসা না খাওয়া হলে শরীরের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সাধারণভাবে, অতিরিক্ত যে কোনো খাবার খাওয়া ভালো নয়। অতিরিক্ত শসা খাওয়ার ফলে হাইপারক্যালেমিয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। এর ফলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা পেটের ফোলা, গ্যাস এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

    আরো পড়ুন ঃ বিটরুট পাউডারের ১০ টি উপকারিতা

    শসা যেহেতু শরীরের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, তাই খুব বেশি শসা খেলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া রাতে অতিরিক্ত শসা খাওয়া বদহজমের সমস্যাও বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং, শসা খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ মেনে খাওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যাদের হজম সংক্রান্ত সমস্যা বা অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।

    লেখক এর শেষ মন্তব্য : ওজন কমাতে শসার উপকারিতা 

    ওজন কমাতে শসার উপকারিতা অসাধারণ। শসা শুধু একটি সাধারণ সবজি নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এক প্রাকৃতিক উপকারী উপাদান। নিয়মিত এবং সঠিক পরিমাণে শসা খেলে শরীর সতেজ থাকে, হজম ভালো থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং নানা রোগের ঝুঁকি কমে। তবে অতিরিক্ত শসা খাওয়া পেট ফোলা, গ্যাস বা হাইপারক্যালেমিয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

    আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে এবং উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না। এছাড়াও, যদি এই বিষয়ে আপনার আরও কিছু তথ্য জানার ইচ্ছে থাকে বা কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনাকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করার।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    নাক্ষোমা এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url