থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয় - উপকারিতা জানুন
থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয়? থানকুনি পাতার ব্যবহার ত্বক ও চুলের যত্নে
সাহায্য করে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ওষুধ হিসেবে কার্যকর। জানতে
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
ত্বক ও চুলের যত্নে থানকুনি পাতার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। এটি একটি ভেষজ ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ। এটির রস চুলের ব্যবহারে রয়েছে যেমন নানা উপকার একই সাথে ত্বকেও এর ব্যবহারে মুক্তি পেতে পারেন আপনার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে।
পেজ সূচিপত্র : থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয়
- থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয়
- থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হয়
- থানকুনি পাতার উপকারিতা
- থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান গুলো
- থানকুনি পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম
- ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতা ব্যবহারের নিয়ম
- থানকুনি পাতার অপকারিতা
- পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা
- লেখক এর শেষ মন্তব্য : থানকুনি পাতা খেলে কি হয়
থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয়
থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয় এমন প্রশ্ন অনেকেরই থাকতে পারে। থানকুনি পাতা অতি
পরিচিত একটি পাতা। থানকুনি গাছ সাধারণত পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে, ঝোপঝাড়ে,
জঙ্গলে জন্মে থাকে। থানকুনি পাতার ঔষধি গুন থাকা এটি যে শুধু রোগ সারাতে ব্যবহৃত
হয় তা কিন্তু নয় এটি রূপচর্চার কাজও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ পাতা মুখে ব্যবহার
রয়েছে নানা উপকারিতা। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতা মুখে ব্যবহার
করলে কি হয় এবং এটি ত্বকে কি কি কাজ করে থাকে।
- মুখের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে
- ত্বকের জেলা বা উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে
- ত্বকের ক্ষতস্থান সারাতে সাহায্য করে
- চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে
- কুচকে যাওয়া ত্বক ঠিক করতে সাহায্য করে
- ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করে
- ত্বক কমল করতে সাহায্য করে
- ত্বক সতেজ করে রাখতে সাহায্য করে
- ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে
- ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে সাহায্য করে
থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হয়
আপনার ত্বকে যদি বিভিন্ন দাগ থাকে এবং সে দাগ দূর করে ত্বককে ফর্সা করতে চান
তাহলে আপনি অনায়াসে থানকনি পাতা খেতে পারেন। থানকুনি পাতার মধ্যে এমন উপাদান
রয়েছে যেগুলো আপনার ত্বকের দাগ দূর করবে এবং আপনার ত্বকে কে ফর্সা উজ্জ্বল
লাবণ্যময় করবে।
ত্বকের কালচে ভাব ত্বকের ভিতরে রাফনেস দূর করবে থানকুনি পাতা। ত্বক ফর্সা করার
জন্য আপনি প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে ৫ থেকে ৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে
খেতে পারেন। থানকুনি পাতার ভিতরে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার
ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে। ভিটামিন সি ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য
করে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি পাতার ব্যবহার রয়েছে নানান ক্ষেত্রে। শুধু যে রান্না করে খাওয়ার জন্য
ব্যবহৃত হয় তা কিন্তু নয় এটি রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়। এই বিশেষ পাতার রয়েছে
বহু ভেষজ গুণ। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ধান করে
ব্যবহার করে হতে পারে উপকৃত। মুক্তি পেতে পারেন সামরিক সমস্যা থেকে। কোন কোন
সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন আপনি এই বিষয়ে জানা থাকলে এ সমস্ত সমস্যা
দেখা দিলে ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেই ঠিক কি কি সমস্যার ক্ষেত্রে
উপকারে আসতে পারে এই থানকুনি পাতা।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে : ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য থানকুনি পাতা একটি মহা ঔষধি বলা যেতে পারে। এ পাতার রস ডায়াবেটিস রোগীদের তিনে দুইবার করে সেবন করলে রক্তের সরবরাহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে : থানকুনি পাতা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। থানকুনি পাতার বেশ কিছু উপাদান হজমের সহায়ক এসিড এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এর ফলে হজমের অনেক সমস্যার দূর হয়ে যায়।
- জ্বরের আশঙ্কা কমায় : অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অথবা ঠান্ডা সর্দি জনিত কারণে জ্বরের সমস্যা হয় অনেকের। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত থানকুনি পাতার রস ও শিউলি পাতার রস খালি পেটে এক চামচ করে মিশিয়ে খেলে জ্বরের আশঙ্কা কমে যায়।
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে : থানকুনি পাতার এমাইডো এসিড, বিটা ক্যারোটিন এবং ফাইটো কেমিক্যাল ত্বকের পুষ্টির ঘাটতি দূর করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়।
- কাশি কমাতে সাহায্য করে : থানকুনি পাতার রস সেবনে কাশি সমস্যা কমে যায়। এজন্য থানকুনি পাতার রস দুই চামচ করে নিয়ে তার ভেতরের সামান্য পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খেলে এটি কাশি কমাতে সাহায্য করে। ভালো ফলাফলের জন্য এটি টানা এক সপ্তাহ খেলে কাশি পুরোপুরি দূর হয়ে যাবে।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে : গ্যাসের সমস্যায় থানকুনি পাতার ব্যবহার খুবই কার্যকরী। আধা লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিস্ত্রি এবং অল্প পরিমানে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে তা রোজ সকালে অল্প অল্প করে খেলে খুব দ্রুত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যাবে। থানকুনি পাতার এই ঘরোয়া চিকিৎসাটা ভীষণ কাজের।
থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান গুলো
থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি নিম্নে আলোচনা করা হলো -
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন সি
- খনিজ
- বিটা ক্যারোটিন
- অ্যামিনো এসিড
- ফ্যাটি অ্যাসিড
থানকুনি পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম
থানকুনি পাতা চুলে দিলে কি হয় এবং ত্বকে ব্যবহার করলে কি হয় সে সমস্ত কিছু
সম্পর্কিত জানতে পেরেছেন তবে এবার জেনে নিন থানকুনি পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন।
কোন জিনিস কি কাজে ব্যবহৃত হতে পারে এ বিষয়ে জানার থাকলেও কি উপায় কি নিয়মে
ব্যবহার করতে হবে সেটি না জানা থাকলে সে জিনিস ব্যবহার করলে কখনোই ভালো ফলাফল
পাওয়া যায় না। তাই আপনি যদি থানকুনি পাতা চুলে ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পেতে চান
তবে অবশ্যই আপনাকে নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে, না হলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন
না। আপনি আপনার চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য থানকুনি পাতার রস সরাসরি চলে এপ্লাই করতে
পারেন।
তবে এক্ষেত্রে চুল পরিষ্কার থাকতে হবে অর্থাৎ শ্যাম্পু করা পরিষ্কার চুলে ভালো
ফলাফল পাওয়া যাবে থানকুনি পাতার রস ব্যবহার করলে। এর কারণ হলো আমাদের স্কাল্পের
চুলের গোড়ায় বিভিন্ন সময় ময়লা আটকে থাকে যার কারণে সম্পূর্ণ রস বা পুষ্টিগুণ
আমাদের চুলের গোড়ায় পৌঁছাতে পারেনা। আধাঘন্টা কিংবা এক ঘন্টা রাখার চেষ্টা
করবেন থানকুনি পাতার রস। থানকুনি পাতার ব্যবহারের সময় এর পুষ্টিগুণ যদি বাড়াতে
চান তাহলে এর সাথে আপনি এলোভেরা জেল মিশিয়ে আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটি
ব্যবহারের পর অবশ্যই আপনার চুলকে শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতা ব্যবহারের নিয়ম
থানকুনি পাতার ব্যবহারের নির্দিষ্ট কোন বিধি নিষেধ নেই। এ পাতাটি আপনি যেকোনো
সময় খেতে পারেন রান্না করে, চিবিয়ে বা রস করে। এছাড়া আপনি যদি মনে করেন এই
পাতার রস মুখে লাগাবেন তাহলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন। তাই ত্বকের যত্ন নিতে
থানকুনি পাতার রস মুখে লাগানোর পর কিছুক্ষণ পর স্বল্প পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন।
আর নরমালি আপনারা যে সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন সেটি দিয়ে মুখ পরিষ্কার
করতে পারেন। এছাড়াও আপনি এটি ত্বকের যত্নে বা চুলের যত্নে খালি পেটে বা চিবিয়ে
কিংবা ভর্তা করে শাক হিসেবে রান্না করে যে কোন ভাবে যেকোনো সময় খেতে
পারেন।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন এর অপকারিতা রয়েছে। ঠিক তেমনি
থানকুনি পাতার যেমন উপকারিতা আছে এর কিছু বিপরীত দিক রয়েছে অর্থাৎ অপকারিতা ও
রয়েছে। থানকুনি পাতা যেহেতু ঔষধি গুন সম্পূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। তাই এটি ব্যবহারে
আমাদেরকে সতর্কতা এবং সচেতনতা অবলম্বন করা প্রয়োজন রয়েছে। সর্তকতা এবং সচেতনার
সাথে যদি এটি ব্যবহার না করা হয় তবে হতে পারে এর বিপরীত। থানকুনি পাতা ব্যবহারের
কিছু নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে না হলে হতে পারে মহা বিপদ। তো চলুন জেনে নেই
থানকুনি পাতার ক্ষতিকর দিকগুলো।
- থানকুনি পাতা থেকে এলার্জি রয়েছে এমন ব্যক্তি থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- থানকুনি পাতা যেমন পেটের ব্যাথা দূর করে তেমনি প্রয়োজনের বেশি মাত্রা অতিরিক্ত খেলে পেটের ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে তাই পরিমাণমতো খেতে হবে।
- প্রয়োজনের বেশি খেলে মাথা ঘোরা সহ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অপারেশন করেছেন এমন রোগীদের থানকুনি পাতা না খাওয়াই ভালো
- যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা থানকুনি পাতা কোনভাবেই খাওয়া যাবে না এতে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যাদের লো ব্লাড প্রেসার রয়েছে তাদের থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা
প্রাচীনকাল থেকে থানকুনি পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন রোগ সারানোর ক্ষেত্রে।
এর মধ্যে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে পেটের সমস্যা দূর করতে। থানকুনি পাতা
প্রায় সকল বড় বয়োজ্যেষ্ঠরা পেটের সমস্যা দেখা দিলে খাওয়ার উপযোগ দিয়ে থাকেন।
শুধু তাই নয় চিকিৎসা বিদ্যার ক্ষেত্রেও দেখা দিয়ে গিয়েছে থানকুনি পাতার
গুনাগুন। বিভিন্ন ঔষধ তৈরির ক্ষেত্রে থানকুনি পাতার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবারই জানা আছে। এই প্রাকৃতিক
উপাদানটি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের জনপ্রিয় একটি ঔষধি উদ্ভিদ।
- পেটের সমস্যা যেমন ডায়রিয়া জনিতে অসুস্থতার ক্ষেত্রে আপনি থানকুনি পাতার রস করে খেতে পারেন। এতে অনেকটা উপকার পেতে পারেন।
- পেটে হজমের সমস্যা থাকলে থানকুনি পাতার রস খেলে হজমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
- পেটে আলসারের মতো সমস্যা থাকলে আপনি থানকুনি পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন এর ঠান্ডা হওয়ায় ভিতরের জ্বালাপোড়া দূর করে স্বস্তি প্রদান করে।
- শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন বের করতে সাহায্য করে থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতা লিভার ও কিডনিতে জমে থাকা টক্সিন এর প্রভাব ফেলে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।
লেখক এর শেষ মন্তব্য : থানকুনি পাতা খেলে কি হয়
থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয় ত্বক ও চুলের যত্নে থানকুনি পাতার ব্যবহার এ
বিষয়টি যানা আপনার জন্য অত্যন্ত আবশ্যক। তাই যদি আপনি আর্টিকেলটি না পড়ে থাকেন
তাহলে সম্পূর্ণ পড়ে নিবেন। কারণ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি প্রাকৃতিকভাবে কি
উপায়ে বিষয়টি ভালোভাবে জানতে পারবেন।
আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি পরে আপনার ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি পড়ে
যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন যেন তারাও উপকৃত হয়
পড়ে। এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহাফেজ 🥰
নাক্ষোমা এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url