ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ও সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ও সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা জানতে হলে এই আর্টিকেলটি
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ ও সুস্থ জীবনের জন্য জেনে
নিন উপকারী খাবারের তালিকা।
বর্তমানে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগ বেড়েই চলছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো
ডায়াবেটিস রোগীদের কি খাবার খাওয়া দরকার সে ব্যাপারে সচেতন না থাকা। সুতরাং
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়ার জন্য এ পোস্টটি মনোযোগ
সহকারে পড়ুন।
পেজ সূচিপত্র : ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
- ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
- ডায়াবেটিস কি ও কেন হয়
- কি খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত কমে
- ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
- ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী ফল ও সবজি
- দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
- ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (FAQ)
- লেখক এর শেষ মন্তব্য : ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়টি এখন আলোচনা করব। আশা
করি এই চার্ট অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করলে আপনারা খুব সহজেই ডায়াবেটিসের মত
প্রাণঘাতী ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন। চলুন পোস্টের এই অংশ থেকে ধারণা নিয়ে
ফেলি ডায়াবেটিস রুগীর খাদ্য তালিকা কি রকম হওয়া উচিত।
- সকালের খাবার তালিকা : সকাল বেলা কি খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত কমে এবার তার একটি চার্ট আপনাদের সামনে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরলাম। মনে রাখবেন সকালের নাস্তায় ক্যালোরি সমৃদ্ধ এবং চিনি কম রয়েছে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে। এ সমন্ধে ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির বিশেষ কিছু টিপস দিয়েছেন। আগে চলুন ডায়াবেটিস রোগীর সকালের খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত তা দেখে ফেলি -
- দুধ
- পিনাট
- সূর্যমুখীর বীজ
- পাউরুটি
- চিনি ছাড়া চা
- ছানা
- পনির
- মাখন ঘি
- তেল ছাড়া রুটি /পরোটা ইত্যাদি
- দুপুরের খাবার তালিকা : যে সকল খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে সেসব খাবার দুপুরের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মনে রাখবেন অধিক তেল চর্বি জাতীয় খাবার আপনার ডায়াবেটিসে মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। সেজন্য শাকসবজি জাতীয় এবং পুষ্টিকর খাবার খাদ্য তালিকায় বেশি পরিমাণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকার এই অংশে দুপুরের খাবার গুলো দেখে নিন -
- লাল চালের ভাত
- নুডুলস
- পান্তা
- মিষ্টি
- আলু
- তৈলাক্ত মাছ
- বীজ
- ডাল
- শিম
- বরবটি
- সিদ্ধ ডিম / ভাজি
- শসা
- গাজর
- টক দই
- পাস্তা
- হালকা তেলের মাংস ইত্যাদি।
- রাতের খাবার তালিকা : ডায়াবেটিস রোগীর রাতের খাবার গুলো অনেকটা দুপুরের খাবারের অনুরূপ হতে পারে। কি খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত কমে এমন সব খাবার সম্পর্কে আপনার পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে এখানে আমরা রাতের বেলা ডায়াবেটিস রোগীর কি কি খাবার খেতে হবে তার একটি তালিকা উপস্থাপন করলাম। এক নজরে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকার রাতের খাবার গুলো দেখে নিন -
- রুটি
- সুপ
- তেল যুক্ত মাছ
- ডাল
- ভাত
- সবজি
- সালাদ
- পটল
- বেগুন
- আখরোট
- বাদাম
- সিমের বিচি
- পাতলা মাখন
- পাউরুটি ইত্যাদি
সুতরাং আপনারা ডায়াবেটিস হলে প্রত্যেক বেলার খাবার তালিকায় কোন ধরনের
খাবার গুলো রাখবেন তা জেনে ফেললেন। আপনার বয়স ও শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী
ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক এ সকল খাবার গ্রহণ করলে দ্রুতই ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন। তাছাড়াও আপনারা চাইলে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার
তালিকা ডক্টর জাহাঙ্গীর কবির স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী সিলেক্ট করতে
পারবেন। উনি দীর্ঘ গবেষণার ফলশ্রুতে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাস
সংক্রান্ত বিষয় গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা ও কার্যকরী সমাধান দিয়েছেন।
অতএব আপনারা ডায়বেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে দারুন আইডিয়া পেয়ে
গেলেন।
ডায়াবেটিস কি ও কেন হয়
এক গবেষণায় দেখা গেছে বর্তমানে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
প্রায় ৫৫ কোটি। বাংলাদেশ সহ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে অন্তত একজন ডায়াবেটিসে
আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস মূলত এক ধরনের মেটাবলিক ডিসঅর্ডার যার শরীরের ইনসুলিন
উৎপাদন প্রক্রিয়া নষ্ট করে ফেলে। ফলে শর্করা ভেঙ্গে রক্তে অতিরিক্ত সুগার জমা
হয়। অগ্নাশয় থেকে মিশ্রিত ইনসুলিন চিলি গুলো থেকে শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু
ইনসেলের উৎপাদন কম হলে প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
যার দরুন ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। জীবনযাপন পদ্ধতিতে অনিয়ম, সঠিক খাদ্যভ্যাস
অনুসরণ না করা ও বংশগত কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। বিভিন্ন
লক্ষণ দেখে আপনি ডায়াবেটিস রোগ চিহ্নিত করতে পারবেন। নিয়ম মাফিক জীবন যাপন
করায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধের মূল মন্ত্র। কি খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত দ্রুত কমে এ
বিষয়টি আপনারা আজকের পোস্ট থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কি খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত কমে
একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে তা থেকে সুস্থ হওয়া অনেক কঠিন। তবে সঠিক
খাদ্যভাস মেনে নিয়ম তান্ত্রিক জীবনযাপন করলে খুব সহজে আপনি ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্যভ্যাস কেমন হওয়া উচিত সে
সম্বন্ধে ব্যাপক ধারণা দ্বারা থাকা দরকার। তবে চলুন এবার জেনে নেই দ্রুত
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় অর্থাৎ কি খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত কমে তার
চমৎকার কিছু খাবার কৌশল সম্পর্কে।
- টক দই : টক দইয়ে অনেক অল্প পরিমাণে মিষ্টি থাকে।এটি রক্তের চিনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এজন্য টক দই ডায়াবেটিস দ্রুত কমাতে অত্যন্ত কার্যকর একটি খাবার হতে পারে। বিকালে হালকা নাস্তার পাশাপাশি টক দই খেলে আপনার ডায়াবেটিস কমে যাবে।
- ডিমের সাদা অংশ : ডিমের সাদা অংশে অনেক উচ্চ মাত্রায় চর্বিহীন প্রোটিন ও কম মাত্রায় শর্করা বিদ্যামান থাকে। ফলে এটি আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। ডাক্তাররামডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- লেবু : ডায়াবেটিস হলে তা নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামকের ভূমিকার পালন করে লেবু। এমনকি ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এটি ইনসুলিনের কাজ করেতে পারে। সেজন্য প্রত্যেক দিনের খাবার তালিকায় লেবু, জাম্বুরা, কমলালেবু ইত্যাদি সংযত করতে পারেন। ডায়াবেটিস দ্রুত কমানোর ক্ষেত্রে এগুলো দারুণ উপকারী হবে।
- চিনা বাদাম ও কাঠবাদাম : ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৩০ শতাংশ কমাতে পারে চিনা বাদাম। আর প্রত্যেক দিনের খাবারে কাজুবাদাম রাখলে সেটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিস্ময়কর অবদান রেখে থাকে। চেষ্টা করবেন প্রত্যেকদিন এক আউন্স কাজুবাদাম বা আখরোট খেতে। এটি ডায়াবেটিস কমাতে সহায়তা করবে।
- মটরশুঁটি : ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি খাদ্য উপাদান হলো মটরশুটি। গবেষণা থেকে জানা যায় এক কাপ মটর শুটির সব ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ প্রহরীর মত কাজ করে। এতে চরবিহীন, প্রোটিন, শর্করা ও আঁশ বেশি পরিমাণে রয়েছে। যা রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- মাছ : মাছের অভ্যন্তরে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড দারুণভাবে ইনসুলিন সংবেদনশীলতাকে উদ্দীপ্ত করতে পারে। একই সাথে এটি রক্তে গ্লুকোজের ঘনত্ব যেমন কমায়, তেমনি শক্তি জুগাতেও ভূমিকা রাখে।
- ভিটামিন সি যুক্ত ফল : ভিটামিন সি এর অভাব হলে খুব সহজে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যে সকল ফলে অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, সেই সমস্ত ফল ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন - পেয়ারা, লেবু, বাদামী জামির, আম।
- গ্রিন টি : আপনি হয়তো ভাবছেন চা খেলেও কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে? হ্যাঁ বন্ধুরা ঠিকই শুনেছেন গ্রিন টি নিয়মিত খেলে আপনি নিমিষেই ডায়াবেটিসের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারবেন। দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর জন্য গ্রিন টি একটি ভালো পানীয়।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
সঠিক খাদ্য অভ্যাস মেনে না চলার কারণেই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে, এ
ব্যাপারে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনারা ইতিমধ্যে কি খেলে ডায়াবেটি
দ্রুত কমে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনেছেন। এবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তার নিজ জেনে রাখুন।
- চা কফি : চা কফি বেশি মাত্রায় পান করা ও ডায়াবেটিস বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সেজন্য চিনি ছাড়া চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে আয়ুর্বেদ চা খান।
- দুগ্ধজাত দ্রব্য ও ময়দা : দুগ্ধ জাতীয় যে সকল খাবার রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণেতা ভাবে খেলে শরীরে হাই ফ্যাট জমা হতে পারে। ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিস সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
- লবণ : ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এই কাঁচা লবণ। আপনি ফলমূল ও শাক সবজির মাধ্যমে যতটুকু লবণ গ্রহণ করেন তাই স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট। তাই অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
- চিনি : চিনি ক্যালসিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট ছাড়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী তেমন কোনো উপাদান প্রোভাইড করে না। বরং চিনি বেশি খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায়, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই চিনি বর্জন করে, প্রাকৃতিকভাবে চিনি রয়েছে এমন খাবার গ্রহণ করুন যেমন গুড়, আখ, মধু।
- তেল চর্বি : তেল চর্বি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন, তবে অধিক তেল চর্বি রক্তের সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করে। সেজন্য আপনার তেলে ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে। অধিকন্ত লাল মাংস খাওয়া যথাসম্ভব কমাতে হবে। যেমন - গরু, খাসি। সেজন্য নিরামিষ খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সপ্তাহে দুই তিন দিন মাছ খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী ফল ও সবজি
ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা এ ব্যাপারে অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন।
বিখ্যাত ব্রিটিশ চিকিৎসক ডক্টর ডেবরাহ বলেন, যে সমস্ত সবজি মাটির উপরে ফলে তা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ। যেমন - বাঁধাকপি, ব্রকলি, পালং শাক ইত্যাদি।
এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মাশরুম, মটরশুটি, ছোলা, কচুর লতি, পেয়াজ,ঢেঁড়স,
ফুলকপি, শসা, চিচিঙ্গা, লাউ, ডাটা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি সবজি গুলো অধিক উপকারী।
তবে অত্যাধিক কার্বোহাইড্রেট যুক্ত বিট, শালগম, মিষ্টি আলু না খাওয়াই
ভালো।
আরো পড়ুন ঃ
ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে হবে। তবে
ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে তার মধ্যে অন্যতম হলো পেয়ারা, কমলালেবু,
আপেল, পেঁপে, তরমুজ ইত্যাদি। এসব ফলে ফ্যাট ও সোডিয়াম কম থাকে এবং ফাইবার ও
ভিটামিন সি অধিক পরিমাণে থাকে, যা ডায়বেটিস প্রতিরোধের দারুণ উপকারী। তবে আম,
কলা, আঙ্গুর, সফেদা ইত্যাদি ফলগুলোতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি থাকাই তা রক্তের
শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের এসব বিপজ্জনক ফল খেতে
না দেওয়াই উত্তম।
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
ডায়াবেটিস আমাদের শরীরের একটি জটিল সমস্যা ও রোগ। ডায়াবেটিস হওয়ার ফলে আমাদের
দৈনন্দিন জীবন থেকে নানান সুস্বাদু খাবার থেকে বঞ্চিত হতে হয় এবং ডায়াবেটিকস
দ্রুত চিকিৎসা না করলে এর ফলাফল অনেক ভয়ংকর বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই
ডায়াবেটিস ধরা পড়লে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
জীবন যাপন করুন।
নিজের দৈনন্দিন জীবনকে পরিবর্তন করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের জীবনকে
পরিচালনা করার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি
ডায়াবেটিক থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেশি থাকবে।
চলুন তবে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক দ্রুত ডায়াবেটিসটি নিয়ন্ত্রণ করার কিছু
উপায়, যেগুলো নিয়ম মত পালন করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দ্রুত চলে আসবে।
- নিয়ম করে দৈনিক ৪০ থেকে ৬০ মিনিট হাটাহাটি করতে হবে। দৈনিক হাটাহাটি করার ফলে আমাদের শরীরে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ থাকার পাশাপাশি আমাদের শরীরের ওজন ঠিক থাকবে।
- নয়নতারা ফুল এটি আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ফুল। এই ফুলের গাছের পাতা দৈনিক দুই থেকে তিনটি চিবিয়ে খাবার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকার সম্ভাবনা থাকে এবং তেতো করলা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তেতো করলা খেলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় এবং ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ আনতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করার জন্য আমাদের শরীরে প্রয়োজন ভিটামিন এ এবং ভিটামিন এ যুক্ত খাবার। মিষ্টি কুমড়া আমাদের খাদ্যের তালিকায় যোগ করতে হবে। কেননা তোমরা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে এবং মিষ্টি করে আমাদের শরীরের চোখের রাতকানা বা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে থাকে।
- ঢেঁড়স ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। ঢেঁড়স কি চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একটি ঢেঁড়স এক গ্লাস পানিতে কেটে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ঢেঁড়সগুলো তুলে অবশিষ্টদের পানিগুলো থাকবে ওই পানিগুলো খালি পেটে পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দ্রুত চলে আসার সম্ভাবনা বেশি।
- নিমের পাতা এবং তুলসী পাতা এ দুটি পাতার বেশ গুণ রয়েছে। ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে এ দুটি পাতা। দৈনিক সকাল বেলা খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা থাকে।
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?
উত্তর : ডায়াবেটিস রোগীদের সবসময় উচ্চকেলরি সমৃদ্ধ ভিটামিন সি ও ফাইবারযুক্ত
খাবার খাওয়া উচিত। যেসব খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে তার মধ্যে থেকে
আপনাকে প্রতিদিন বেছে বেছে খাবার খেতে হবে।
প্রশ্ন : খাওয়ার পর কি সুগার বেড়ে যায়?
উত্তর : যে কোন খাবার খেলে আমাদের দেহে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। আর শর্করা
দেহের মধ্যে বাড়তে শুরু করলে সেখান থেকে চিনি নির্গত হয়। তাই খাওয়ার পরে সুগার
বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত?
উত্তর : খালি পেটে ডায়াবেটিসের মাত্রা ৫.৫ থাকা অনেক ভালো। তবে ৫.৫ এর চেয়ে
বেড়ে গেলে আপনাকে খাদ্য ভ্যাসের সচেতন হতে হবে।
প্রশ্ন : খাওয়ার পর ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?
উত্তর : খাবার পরে ভরা পেটে ডায়াবেটিসের মাত্রা ৮ পয়েন্টের নিচে হলে সেটিকে
স্বাভাবিক বা নরমাল ধরা যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিসের মাত্রা আটের বেশি হলে সেটি
অবশ্যই চিন্তনীয় বিষয়।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস কি বংশগত রোগ?
উত্তর : টাইপ ১ - ডায়াবেটিস বংশগত কারণে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের
সংক্রমণে কিছুতেই ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। যেকোনো বয়সেই ডায়াবেটিস আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লেখক এর শেষ মন্তব্য : ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
এতক্ষণ আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা এবং সব তথ্য
সম্পর্কে। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি এই আর্টিকেলটি
পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজন সবাইকে
আমন্ত্রণ জানাবেন।
সেই সাথে এই আর্টিকেলটিকে শেয়ার করে দিয়ে পাশে থাকবেন এবং কোন ভুল ত্রুটি হলে
কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য
ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ 🥰
নাক্ষোমা এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url